শিরোনাম

রেল দুর্ঘটনা

রেল সেতু নির্মাণ ও সংস্কারে আশু উদ্যোগ প্রয়োজন

দেশের বেশিরভাগ রেল সেতু ব্রিটিশ আমলে নির্মিত। ৯০ শতাংশেরই আয়ুষ্কাল শেষ। ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় যাত্রী ও পণ্যবাহী ট্রেন চলাচলে বিঘœ ঘটে। শত বছরের পুরোনো সেতু প্রায়ই মেরামত করতে হয়। ঝুঁকিপূর্ণ-জরাজীর্ণ ও জোড়াতালি দিয়ে মেরামত করা সেতুর…


দক্ষতা বাড়াতে যথাযথ প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করুন

রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানে দক্ষ জনবলের স্বল্পতা নতুন নয়, বিশেষত এটি সংকটে রূপ নিয়েছে সেবা প্রদানকারী সংস্থায়। পানি বা বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থার পাশাপাশি সড়ক ও রেল যোগাযোগে নিয়োজিত রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানে দক্ষ কর্মীর স্বল্পতা সংকটে রূপ নিয়েছে। যে কারণে দুর্ঘটনা সংঘটন থেকে শুরু করে সেবা কার্যক্রম মারাত্মক বিঘ্নিত হচ্ছে। রেল দুর্ঘটনার এক তদন্ত প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বণিক বার্তায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, একের পর এক রেল দুর্ঘটনার জন্য রেলকর্মীদের অদক্ষতাই মূলত দায়ী। বাংলাদেশ রেলওয়ের অবকাঠামো উন্নয়নে বিপুল ব্যয় করা হলেও এ খাতের জনবল সংকটের ব্যাপারে খুব সামান্যই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পাকিস্তান আমলের পাঠ্যক্রম দিয়ে এখনো রেলকর্মীদের প্রশিক্ষণ চলছে, যা দক্ষ জনবল তৈরির পথে বড় অন্তরায়। রেলওয়ের উন্নয়নে অবকাঠামোর দিকেই শুধু লক্ষ না রেখে যাত্রীসেবার মান বাড়ানোর দিকেও সরকারের নজর দেয়া দরকার। অবকাঠামোগত উন্নয়নের সঙ্গে জনবলের সক্ষমতা উন্নয়নের দিকেও আমাদের লক্ষ্য থাকা উচিত। অতীতে রেলের পৃথক কর্মচারী রিক্রুটমেন্ট বোর্ড ছিল; যা মোটামুটি স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও কার্যকরভাবে কর্মসম্পাদন করত বলে আজো সুনাম আছে। তত্কালীন সরকার শুধু কর্মী ছাঁটাই করেই ক্ষান্ত হয়নি, দুর্নীতির সুযোগ প্রশস্ত করার জন্য রেলওয়ে কর্মকর্তাদের ওপর নিয়োগ প্রদানের দায়িত্ব ন্যস্ত করে দেয়; যাদের কোনো জবাবদিহিতা ছিল না। ফলে কার্যত সে সময় থেকেই রেলে নিয়োগ বাণিজ্যের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘটে যায়। ভবিষ্যতে রেলপথও বাড়বে। কিন্তু সে তুলনায় নিরাপদ হয়নি রেল যোগাযোগ। রেলপথের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। প্রায় দুই কিলোমিটার পরপর রেলপথ দেখভাল করে রেলের কর্মী বাহিনী। সংশ্লিষ্ট কর্মীরা রেলপথে এক পাশ দিয়ে একবার হেঁটে অন্য পাশ দিয়ে ফিরে আসেন। তাতে নাটবল্টু, ক্লিপ, ফিশপ্লেট ঠিকঠাক আছে কিনা ধরা পড়ে। নুড়িপাথর না থাকলে ঊর্ধ্বতনদের জানানোর দায়িত্ব একদল কর্মীর। কিন্তু তারা যথাযথভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করছেন না বা দক্ষতার অভাবে ত্রুটি চিহ্নিত করতে পারছেন না। ভারতেও একসময় রেলের অবস্থা খারাপ ছিল। ভারত সরকারের মোহন কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছিল, যেভাবে চলছে তাতে ভারতীয় রেলওয়ে খুব দ্রুত দেউলিয়া হয়ে যাবে। কিন্তু ২০০৪ থেকে ভারতীয় রেলওয়ে ঘুরে দাঁড়ায়। প্রস্তাব অগ্রাহ্য করে যাত্রীভাড়া কমায়। ছাঁটাইয়ের বদলে ২০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়। কারখানা বেসরকারীকরণের বিপরীতে ডিজেল ও ইলেকট্রনিক ইঞ্জিন, চাকা, যাত্রীবাহী কোচ তৈরির সক্ষমতা বাড়ানোর পদক্ষেপ নেয়া হয়। নতুন কারখানা নির্মাণের পাশাপাশি রুগ্ণ কারখানা অধিগ্রহণ করা হয়। যাত্রীভাড়া কমিয়ে ও সেবা বাড়িয়ে লাভজনক করা হয়। পণ্য পরিবহনের উন্নয়ন ঘটিয়ে রেলের আয় কয়েক গুণ বাড়ানো হয়। ভারতে যদি রেলের এই উন্নতি সাধন সম্ভব হয়, তাহলে বাংলাদেশে তা না হওয়ার কোনো কারণ নেই। আন্তরিকভাবে চাইলে অবশ্যই রেলকে লাভজনক করা সম্ভব। সেজন্য বিদ্যমান সম্পদ ও অবকাঠামোর সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। শুধু দুর্ঘটনা রোধ নয়, যাত্রী ও পণ্যসেবা নিশ্চিতেও কর্মীর দক্ষতা বাড়ানো প্রয়োজন। গত পাঁচ বছরের দুর্ঘটনা বিশ্লেষণ করে এর দুটি কারণ পাওয়া যায়। প্রথমত, মানবিক ভুল (হিউম্যান এরর); দ্বিতীয়ত, কারিগরি ত্রুটি। গড়ে ৮০ শতাংশের বেশি দুর্ঘটনার জন্য দায়ী মানুষের ভুল। অর্থাৎ দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ভুলে বা অবহেলায় দুর্ঘটনা ঘটছে। মানুষের ভুলের মধ্যে রয়েছে লাইন পরিবর্তনের জোড়া (পয়েন্টস) ভুলভাবে স্থাপন করা ও ভুল সংকেত দেয়া। এ কাজগুলো সাধারণত স্টেশনমাস্টার ও তার অধীন ব্যক্তিদের। সংকেত ও যথাযথ গতিনির্দেশিকা না মেনে ট্রেন চালান চালক ও সহকারী চালকরা। মানুষের ভুল এড়ানো সম্ভব প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বাড়িয়ে। কড়া শাস্তি দিয়েও দৃষ্টান্ত স্থাপন করা যায়। কিন্তু রেলে মানুষের করা ভুল শোধরানোর জন্য তেমন কোনো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। আর শাস্তি কেবল নিচের দিকের কর্মীদের হয়। তদন্তে বড় কর্মকর্তাদের নাম আসে না, শাস্তিও হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে কারিগরি ত্রুটি মোকাবেলায় পর্যাপ্ত বরাদ্দ ও লোকবল আছে। একের পর এক ভুল হতে থাকলেও কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়নে রেলের তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কয়েক বছর ধরে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি করছে সব মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে। রেলের সঙ্গে করা চুক্তি অনুসারে, প্রতি কর্মীর বছরে অন্তত ৬০ ঘণ্টা প্রশিক্ষণ নেয়ার কথা। কিন্তু এটি সঠিকভাবে পরিপালন করা হচ্ছে কিনা, সে সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্ত মেলে না। নব্বইয়ের দশকে গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে রেলে বড় ধরনের কর্মী ছাঁটাই হয়। ওই সময় যেসব কর্মীকে ছাঁটাই করা হয়, তাদের বেশির ভাগই ছিলেন কারিগরিভাবে বেশ দক্ষ। পরবর্তী সময়ে সেই দক্ষ জনবলের ঘাটতি আর পুষিয়ে উঠতে পারেনি রেলওয়ে। নতুন জনবল এলেও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণের অভাব, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম-দুর্নীতি, কর্মীদের প্রয়োজনীয় নজরদারি ও জবাবদিহিতার মধ্যে রাখতে না পারাসহ বিভিন্ন কারণে রেলকর্মীদের দক্ষতায় বড় ধরনের ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। রেল দুর্ঘটনা কমানো ও সংস্থাটি লাভজনক করতে কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও শূন্য থাকা কারিগরি পদগুলো দ্রুত পূরণের কোনো বিকল্প নেই। সুত্র:বণিক বার্তা, জানুয়ারি ২৩, ২০২০


দুর্ঘটনা ঘটলেও তদন্ত প্রতিবেদন দেয় না কমিটি

ছয় বছর ধরে রেল দুর্ঘটনার হার ক্রমেই বাড়ছেহতাহতের সংখ্যাও বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারেআবার দুর্ঘটনার কারণ উদ্ঘাটনে তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও সেসব কমিটি যথাসময়ে প্রতিবেদন জমা দিচ্ছে নাফলে দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণও জানা যাচ্ছে না, যা দুর্ঘটনা রোধে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, রেলওয়ের শুধু ঢাকা বিভাগে ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২৯টি দুর্ঘটনা ঘটে এসব দুর্ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটি নির্ধারিত সময়ে প্রতিবেদন জমা দেয়নি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের একাধিকবার তাগাদা দিয়ে চিঠি পাঠানো হলেও সাড়া দেয়নি তারা। ২০১৬ সালের ২২ জুন রেলওয়ের ঢাকা ইয়ার্ডে দুর্ঘটনার শিকার হয় ৪৯ নং ট্রেন। একই বছরের ৩১ আগস্ট ৯৫২ নং ট্রেন, ১১ আগস্ট বি স্পেশাল ১২ ট্রেন ও ২১ অক্টোবর ৪ নং ট্রেন দুর্ঘটনায় পড়ে। এসব দুর্ঘটনার কারণ তদন্তে গঠিত কমিটি এখনো প্রতিবেদন জমা দেয়নি। একইভাবে ২০১৭ সালের পাঁচটি দুর্ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন এখনো জমা পড়েনি। দুর্ঘটনাগ্রস্ত এ পাঁচ ট্রেন হচ্ছে তারাকান্দি ফার্টিলাইজার স্পেশাল, আশুগঞ্জ হপার ই নং ২২০৬, আশুগঞ্জ শাটল, ৪৯ নং ডাউন ও ৮০৯ নং ট্রেন। ২০১৮ সালে দুর্ঘটনার শিকার হয় ২৬৩ নং, ৯৭১ নং, ২৪৪ নং, ৩৭ নং, ২৬৪ নং, ৪৪ নং ও বিটি ট্রেন। এসব দুর্ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন এখনো জমা পড়েনি। আর চলতি বছর সংঘটিত ১২টি রেল দুর্ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন দেননি দায়িত্বপ্রাপ্তরা। রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সাল থেকে চলতি বছরের মে পর্যন্ত রেলওয়ের দুর্ঘটনা ঘটেছে ১ হাজার ৮টি। এসব দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায় ১১৬ জন ও আহত হয় ২৯৫ জন। ২০১৪ সালে ২৪২টি দুর্ঘটনার পর ২০১৫ সালে রেলে দুর্ঘটনার সংখ্যা কমে নেমে আসে ১৫৩-তে। এরপর ২০১৬ সালে দুর্ঘটনা আরো কমে হয় ১৩১টি। তবে ২০১৭ সালে দুর্ঘটনার সংখ্যা ফের বাড়তে শুরু করে। ২০১৭ সালে ১৪০টি, ২০১৮ সালে ১৫০টি ও চলতি বছরের মে পর্যন্ত ২৬টি দুর্ঘটনা ঘটে। তবে জুনে একাধিক দুর্ঘটনার কারণে চলতি বছরও দুর্ঘটনার হার আগের বছরকে ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। রেলের নথি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সাত ধরনের দুর্ঘটনার মুখোমুখি হয় চলাচলরত ট্রেনগুলো। ধরনগুলো হচ্ছে মুখোমুখি সংঘর্ষে দুর্ঘটনা, এড়ানো বা বিপরীতমুখী সংঘর্ষ, ট্রেন বিচ্ছিন্ন হওয়া, লেভেল ক্রসিং গেটসংক্রান্ত দুর্ঘটনা, সিগন্যাল ত্রুটিজনিত দুর্ঘটনা, লাইনচ্যুত দুর্ঘটনা ও অন্যান্য তবে এ সময়ে সংঘটিত দুর্ঘটনার মধ্য লেভেল ক্রসিং গেটের দুর্ঘটনার সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো.শামসুজ্জামান বণিক বার্তাকে বলেন, রেলের দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়লেও দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা তুলনামূলক অনেক কম। আর দুর্ঘটনাগুলোও নিতান্তই ছোট আকারেরদীর্ঘদিনের পুরনো সেতুর কারণে যেসব দুর্ঘটনা ঘটে, সেগুলো নিয়ন্ত্রণে নানা ধরনের উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে। সুত্র:বণিক বার্তা,


রেল দুর্ঘটনায় দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি

সিলেট থেকে গত রোববার রাতে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী আন্তঃনগর ‘উপবন এক্সপ্রেস’ ট্রেন দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানসহ দায়ী ব্যাক্তিদের দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। গতকাল সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো সংগঠনের মহাসচিব মোঃ মোজাম্মেল হক…