শিরোনাম

নভেল করোনাভাইরাস

সুরক্ষাসামগ্রী ক্রয়ে অনিয়ম রোধে কর্তৃপক্ষের অনুরোধপত্র!

সুজিত সাহা : নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হলে ২৫ মার্চ থেকে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল গত দুই মাসেরও বেশি। যদিও ওই সময়ে পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক ছিল। মাঠ পর্যায়ে কর্মরত কর্মীদের জন্য রেলের বিভিন্ন বিভাগ থেকে কেনা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের সুরক্ষাসামগ্রী। রেলের কেনা এসব সুরক্ষাসামগ্রীর মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে প্রথম থেকেই। নিম্নমানের পাশাপাশি নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে কেনা সামগ্রীগুলো অস্বাভাবিক দামে ক্রয়ে অনিয়মেরও অভিযোগ উঠেছে। এ অবস্থায় ক্রয় ব্যবস্থাপনায় সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও অনিয়ম রোধে রেলের সব বিভাগীয় প্রধানকে অনুরোধ জানিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। ১০ জুন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপকের কার্যালয় থেকে দেয়া ওই অতীব জরুরি পত্রে দেখা গেছে, রেলের বিভিন্ন বিভাগে করোনাকালীন স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী ক্রয়ের অনিয়মের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মানসম্মত সামগ্রী প্রদান ও যৌক্তিক দাম নির্ধারণের অনুরোধ করা হয়। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সব বিভাগীয় প্রধানকে উদ্দেশ করে এ চিঠি দেয়া হয়। চিঠির অনুলিপি দেয়া হয় বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক, প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক (সিসিএস-পাহাড়তলী), বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজারকে (ডিআরএম-ঢাকা, চট্টগ্রাম)। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক (সিসিএস) রুহুল কাদের আজাদ নিরাপত্তাসামগ্রী ক্রয়ের ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম নেই বলে দাবি করেন। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী কেনা হচ্ছে। যদিও সম্প্রতি রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপকের দপ্তর থেকে সব বিভাগীয় প্রধানকে এ বিষয়ে চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। আমরা চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে সুরক্ষা সামগ্রী কেনাকাটায় স্বচ্ছতা আনতে কাজ করছি। অভিযোগ রয়েছে, মার্চে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ১১টি দপ্তর কয়েক দফায় সুরক্ষা সামগ্রী ক্রয় শুরু করে। পাশাপাশি সিসিএস দপ্তরও বিভিন্ন দপ্তরের অনুরোধে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী ক্রয় প্রক্রিয়া শুরু করে। এর মধ্যে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বৈদ্যুতিক বিভাগ, ভূসম্পত্তি বিভাগ, প্রকৌশল বিভাগের সুরক্ষা সামগ্রী ক্রয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সম্প্রতি বাণিজ্যিক দপ্তরের সুপারিশে সিসিএস কার্যালয় বিভিন্ন স্টেশনে সুরক্ষা যন্ত্রপাতি বসানোর উদ্যোগ নেয়। কিন্তু দরপত্র তৈরি না হওয়ার আগেই নির্দিষ্ট একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এরই মধ্যে এসব সামগ্রী বিভিন্ন স্টেশনে বসানো হয়েছে। এসব সামগ্রী ক্রয়ে বড় ধরনের অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন রেলের বিভিন্ন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও। দরপত্র ঘোষণার আগেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সুরক্ষা সামগ্রী প্রদানের বিষয়টি এড়িয়ে যান রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রকও। গত ১০ জুন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্টকে (সিওপিএস) দেয়া ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, নভেল করোনাভাইরাস প্রতিরোধে নিম্নমানের সামগ্রী সংগ্রহ এবং এসব সুরক্ষা সামগ্রী বাজার দরের চেয়েও অতিরিক্ত মূল্যে সংগ্রহ করা হচ্ছে। সম্প্রতি এ বিষয়ে বেশকিছু অভিযোগ পাওয়া গেছে। কভিড-১৯ প্রতিরোধকল্পে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সম্মানিত যাত্রীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে নিম্নমানের সুরক্ষা সামগ্রী সংগ্রহ বা বাজার দরের চেয়ে অধিক মূল্যে ক্রয়ের কোনো সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে রেলের ক্রয় নীতিমালার প্রচলিত বিধিবিধান অনুসরণ করে মানসম্মত সুরক্ষা সামগ্রী বাজার দরের ভিত্তিতে যৌক্তিক মূল্যে ক্রয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করতে অনুরোধ জানান রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক সরদার সাহাদাত আলী। রেলওয়ের মাঠ পর্যায়ের একাধিক কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষ থেকে এপ্রিলের শুরু থেকেই কয়েক দফায় ভাইরাস প্রতিরোধে বিভিন্ন সুরক্ষা সামগ্রী ক্রয় শুরু হয়। এর মধ্যে রয়েছে পারসোনাল প্রটেকশন ইকুইপমেন্ট (পিপিই), হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক, গ্লাভস, গগলস, রেলওয়ে হাসপাতালগুলোর জন্য বিভিন্ন স্বাস্থ্য সরঞ্জাম, হ্যান্ড থার্মাল স্ক্যানার ইত্যাদি। দ্রুত ক্রয়ের স্বার্থে এসব সামগ্রীর অধিকাংশ সীমিত দরপত্র পদ্ধতিতে ক্রয় করা হচ্ছে। কিন্তু বাজার যাচাই ছাড়াই দরপত্র মূল্যায়নের আগেই এসব সামগ্রী পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে সরবরাহ করানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রেলের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো থেকে চাহিদাপত্র আসার আগেই একাধিক সুরক্ষা পণ্য সরবরাহের বিষয়টি জানেন না রেলের সিসিএম দপ্তরও। সম্প্রতি রেলের কয়েকটি দপ্তরের কর্মীরা নিম্নমানের সুরক্ষা সামগ্রী প্রদানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভও করেছে। সিসিএস দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বণিক বার্তাকে বলেন, রেলের বিভিন্ন দপ্তর থেকে কভিড-১৯ প্রতিরোধে সুরক্ষা সামগ্রী কেনার জন্য চাহিদাপত্র দেয়া হয়েছে। আমরা তালিকাভুক্ত একাধিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করে বাজারদর যাচাই করেছি। এরপর সীমিত দরপত্র পদ্ধতিতে প্রতিষ্ঠানগুলোর আবেদন মূল্যায়ন করছি। কিন্তু দরপত্র মূল্যায়ন শেষে কার্যাদেশ প্রদানের আগেই সুরক্ষা পণ্য সরবরাহের বিষয়টি আমরাও শুনেছি। কীভাবে এসব ক্রয় হয়েছে সে বিষয়ে আমাদের কোনো ধারণা নেই বলে দাবি করেন তিনি। রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নভেল করোনাভাইরাস প্রতিরোধে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী নিয়মিত বিরতিতে ক্রয় করা হচ্ছে। কিন্তু অনেক বিভাগই কাপড়ের মাস্ক, নিম্নমানের হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও গগলস ক্রয় করায় কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। দ্রুত সময়ে ক্রয়ের কারণে অনেক বিভাগই কেনাকাটায় সরকারি নীতিমালা অনুসরণ করছে না। মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের দেয়া সুরক্ষা সামগ্রী ক্রয়ের অনিয়মের বিরুদ্ধে রেলের একাধিক বৈঠকে নির্দেশনা দেয়া হলেও সেটি মানা হচ্ছে না। এ কারণে বাধ্য হয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপকের দপ্তর চিঠির মাধ্যমে সব বিভাগীয় প্রধানকে অনুরোধ জানাতে বাধ্য হয়েছে। স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী ক্রয় ও সরবরাহের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত দাম ও মান যাচাই করা না হলে রেলের কর্মরত ২৬ হাজার কর্মীর নভেল করোনাভাইরাসের ঝুঁকি আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি। জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ে শ্রমিক নেতা মো. সাজ্জাদ হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, রেলওয়ে একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান হওয়ায় রেলের উচ্চ পর্যায় থেকে মাঠ পর্যায়ের কর্মীরাও দুর্যোগকালীন সময়ে কাজ করছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করলেও রেলওয়ে কর্মীদের দেয়া হচ্ছে নিম্নমানের সুরক্ষা সামগ্রী। এরই মধ্যে সারা দেশে বিপুল পরিমাণ রেলওয়ে কর্মী বা কর্মকর্তা নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। সুরক্ষা সামগ্রী ক্রয়ের ক্ষেত্রে অনিয়ম দূর করা না হলে নভেল করোনাভাইরাসের মতো মহামারীতে রেলওয়ের সব শ্রেণীর কর্মীরা বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়বেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। সূত্র:বণিক বার্তা, জুন ২৬, ২০২০


ট্রেন কমছে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে

।।নিউজ ডেস্ক।। সীমিত পরিসরে বর্তমানে ১৯টি ট্রেন পরিচালনা করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। দীর্ঘ দুই মাসের বেশি বন্ধ থাকার পর গত ৩১ মে যখন প্রথম দফায় আটটি ট্রেন চলাচল শুরু হয়, তখন টিকিটের জন্য বলতে গেলে হাহাকার লেগে গিয়েছিল। অনলাইনে টিকিট বিক্রি কার্যক্রম শুরুর ১ ঘণ্টার মধ্যেই শেষ হয়ে যেত সব টিকিট। কালোবাজারে টিকিট বিক্রির অভিযোগও ছিল সে সময়। তবে ১৫ দিন পার হতেই বদলে গেছে সেই চিত্র। কোনো কোনো রুটে একেবারেই যাত্রী হচ্ছে না। এমন পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে একটি ট্রেন বন্ধ করে দেয়ার পরিকল্পনা করছে রেলওয়ে। নভেল করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে গত ২৬ মার্চ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়েছিল যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল। ৩১ মে থেকে আট জোড়া ট্রেন সীমিত পরিসরে পরিচালনা শুরু হয়। ৩ জুন পরিচালনায় যোগ দেয় আরো ১১ জোড়া ট্রেন। প্রতিটি ট্রেনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক টিকিট বিক্রি করে আসছে রেলওয়ে। টিকিট বিক্রির পুরো প্রক্রিয়াটি চলছে অনলাইনে। চলাচলের সময় রুটে থাকা বিভিন্ন স্টেশনের যাত্রাবিরতির পরিমাণ কমিয়ে দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে দুটি ট্রেন পরিচালিত হচ্ছে। সকাল ৭টায় ঢাকা থেকে ছেড়ে যাচ্ছে আন্তঃনগর সোনার বাংলা এক্সপ্রেস। একইভাবে বিকাল সাড়ে ৪টায় ঢাকা থেকে ছেড়ে যাচ্ছে আন্তঃনগর সুবর্ণ এক্সপ্রেস। দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রেল রুটটি প্রত্যাশিত যাত্রী হচ্ছে না। বিপরীতে দুটি ট্রেন পরিচালনা করতে গিয়ে প্রতিদিন মোটা অংকের অর্থ লোকসান হচ্ছে। এমন পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের একটি ট্রেন কমিয়ে ফেলার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তবে সোনার বাংলা ও সুবর্ণ এক্সপ্রেসের মধ্যে কোন ট্রেনটি বন্ধ হবে, তা গতকাল পর্যন্ত চূড়ান্ত করতে পারেননি রেলওয়ের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, রুটটির দুই প্রান্ত থেকে দুদিক দিয়েই যাত্রীর চাহিদা রয়েছে। এমন অবস্থায় কোন ট্রেনটি বন্ধ হবে, তা নিয়ে রেলওয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করছে। তবে আজই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে জানিয়েছে রেল ভবনের একটি সূত্র। এদিকে একটি নয়, দুটি রুটে ট্রেন কমানোর পরিকল্পনার কথা গতকাল বণিক বার্তাকে জানিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. শামছুজ্জামান বণিক বার্তাকে বলেন, ৩১ মে থেকে আমরা যখন সীমিত পরিসরে কয়েকটি ট্রেন চালু করি, তখন ট্রেনগুলোতে প্রথম ৮-১০ দিন ভালোই যাত্রী হচ্ছিল। কিন্তু কয়েকদিন ধরে কিছু ট্রেনে একেবারেই যাত্রী হচ্ছে না। এর মধ্যে সবচেয়ে কম যাত্রী হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-ময়মনসিংহের মধ্যে। আমরা এখনো ট্রেনগুলোতে যাত্রীর পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করছি। আমরা এ দুই রুটে একটা একটা করে দুটো ট্রেন কমাতে পারি। তবে এখনো এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। আমরা ট্রেনের সংখ্যা বাড়াতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বিদ্যমান করোনা পরিস্থিতির কারণে সেটা তো সম্ভব হয়ইনি, উল্টো এখন ট্রেন কমানোর ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করতে হচ্ছে। তবে পরিস্থিতি যদি ট্রেন চলাচলের উপযোগী হয়, তাহলে আরো নতুন ট্রেন চালু করা হবে বলে এ সময় জানান তিনি। শুধু ট্রেন নয়, যাত্রী সংকট রয়েছে নৌ ও সড়কপথেও। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) তথ্য বলছে, বর্তমানে ঢাকার সদরঘাট থেকে ৫৫ থেকে ৬০টি লঞ্চ দেশের বিভিন্ন রুটে যাতায়াত করছে। স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন দেড়শর বেশি লঞ্চ চলাচল করত। বিআইডব্লিউটিএর সদরঘাট টার্মিনালের যুগ্ম মহাপরিচালক আলমগীর কবির বণিক বার্তাকে বলেন, সাধারণ ছুটির পর যখন লঞ্চ চলাচল শুরু হয়, তখন বেশির ভাগ লঞ্চেই প্রচুর যাত্রী থাকত। বর্তমানে যাত্রীর চাপ তুলনামূলক কম। আগে যেখানে ঢাকা-চাঁদপুর রুটে প্রতি ১ ঘণ্টা পরপর একটি করে লঞ্চ ছেড়ে যেত। আর গতকাল রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত চাঁদপুরের উদ্দেশে সদরঘাট ছেড়েছে মাত্র ১২টি লঞ্চ। শিডিউলে ছিল আরো দুটি। দেশের অন্য নৌরুটেও একই অবস্থা। তবে প্রতিটি লঞ্চেই যাত্রীর সংখ্যা চোখে লাগার মতো কম ছিল বলে জানিয়েছেন তিনি। লঞ্চে যাত্রী কম থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি মাহবুব উদ্দিন বণিক বার্তাকে বলেন, চালুর পর কিছুদিন তুলনামূলক যাত্রী হতো। কিন্তু এখন অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে লঞ্চ চালিয়ে তেলের টাকাই তুলতে পারছেন না মালিকরা।  একইভাবে যাত্রী সংকটের কথা জানিয়েছেন ঢাকার গণপরিবহন মালিকরাও। তারা বলছেন, সকালে অফিস শুরুর আগে ও অফিস ছুটির পর বাদ দিয়ে দিনের পুরোটা সময় গাড়ির মোট আসনের ১০-১৫ শতাংশ যাত্রী নিয়ে বাস চালাতে হচ্ছে। বাড়তি ভাড়া আদায় করেও বাসের পরিচালন ব্যয় তোলা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তারা। দূরপাল্লার বাসেও আসনের ৫০ শতাংশ যাত্রী না হওয়ার কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও শ্যামলী পরিবহনের মালিক রমেশ চন্দ্র ঘোষ। সূত্র:বণিক বার্তা, জুন ১৭, ২০২০


আরো ১৭টি ট্রেন চালুর পরিকল্পনা

সুজিত সাহা : দীর্ঘ ৬৭ দিন বন্ধ থাকার পর ৩১ মে থেকে যাত্রীবাহী ট্রেন সার্ভিস চালু করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। শতভাগ অনলাইন টিকিটিংয়ের মাধ্যমে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে চলছে এসব ট্রেন। সরকার ১৫ জুন পর্যন্ত নভেল করোনাভাইরাস পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখায় ১৬ জুন  থেকে আরো ১৭টি যাত্রীবাহী ট্রেন চালানোর উদ্যোগ নিয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে এসব ট্রেন চালু করতে অফিস আদেশ আসবে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা। ৩১ মে ও ৩ জুন থেকে দুই দফায় ৩৮টি যাত্রীবাহী ট্রেন চালুর পর নতুন করে আরো ১৭টি ট্রেন চালুর বিষয়ে সম্প্রতি রেলওয়ের উভয় অঞ্চলের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে একটি ভার্চুয়াল বৈঠক করে রেলভবন। মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে উভয় অঞ্চলের পরিবহন বিভাগের কর্মকর্তারা ১৬ জুন থেকে নতুন বেশকিছু যাত্রীবাহী ট্রেন চালানোর প্রস্তাব দেয়। ওই প্রস্তাব অনুসারে ট্রেনগুলো চালানোর বিষয়ে পরিকল্পনা প্রণয়ন করছে রেলভবন। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে এসব ট্রেন চালানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয়া হবে। এরই মধ্যে ট্রেনগুলো চালানোর প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে দুই অঞ্চলের রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো। রেলওয়ে পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের পরিবহন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১৬ জুন থেকে চালু হতে যাওয়া ট্রেনগুলো হচ্ছে ঢাকা-তারাকান্দি-ঢাকা রুটের অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস (৭২৫/৭৩৬), ঢাকা-মোহনগঞ্জ-ঢাকা রুটের হাওড় এক্সপ্রেস (৭৭৭/৭৭৮), ঢাকা-কিশোরগঞ্জ রুটের এগারসিন্দুর প্রভাতী (৭৩৭) ও ঢাকা-সিলেট-ঢাকা রুটের পারাবত এক্সপ্রেস (৭০৯/৭১০)। অপরদিকে পশ্চিমাঞ্চল রেলের সম্ভাব্য ট্রেনগুলো হচ্ছে ঢাকা-রাজশাহী-ঢাকা রুটের পদ্মা এক্সপ্রেস (৭৫৯/৭৬০), ঢাকা-খুলনা-ঢাকা রুটের সুন্দরবন এক্সপ্রেস (৭২৫/৭২৬), ঢাকা-বীরশ্রেষ্ঠ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম-ঢাকা রুটের একতা এক্সপ্রেস (৭০৫/৭০৬), ঢাকা-রংপুর-ঢাকা রুটের রংপুর এক্সপ্রেস (৭৭১/৭৭২) ও রাজশাহী-চিলাহাটি-রাজশাহী রুটের তিতুমীর এক্সপ্রেস (৭৩৩/৭৩৪)। তবে নতুন প্রস্তাবিত ট্রেনগুলোর মধ্যে যাত্রী চাহিদা ও গুরুত্বের বিবেচনায় সংযোজন-বিয়োজন হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ট্রেন চালুর বিষয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক সরদার শাহাদাত আলী বণিক বার্তাকে বলেন, অর্থনৈতিক কার্যক্রম চালু রাখার স্বার্থে ১৫ জুন পর্যন্ত সীমিত পরিসরে যাত্রীবাহী ট্রেন সেবাও চালু করা হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় নতুন করে আরো বেশকিছু ট্রেন চালানোর চিন্তাভাবনা চলছে। সবকিছু নির্ভর করছে রেলভবনের ওপর। আনুষ্ঠানিক চিঠি বা নির্দেশনা এলে নতুন কিছু রুটে ট্রেন চালু করতে প্রস্তুতি নেয়া আছে বলে জানিয়েছেন তিনি। সাধারণ ছুটি ১৫ জুন পর্যন্ত প্রত্যাহারের পর ৩০ মে সীমিত পরিসরে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলের ঘোষণা দেয় রেলওয়ে। নভেল করোনাভাইরাস প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ট্রেন চালানোও শুরু করে। এর মধ্যে ৩১ মে চলাচলকারী ৮ জোড়া ট্রেনের মধ্যে রয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের সুবর্ণ এক্সপ্রেস (৭০১/৭০২) ও সোনার বাংলা এক্সপ্রেস (৭৮৭/৭৮৮), ঢাকা-সিলেট রুটের কালনী এক্সপ্রেস (৭৭৩/৭৭৪), ঢাকা-বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম রুটের পঞ্চগড় এক্সপ্রেস (৭৯৩/৭৯৪), ঢাকা-রাজশাহী রুটের বনলতা এক্সপ্রেস (৭৯১/৭৯২), ঢাকা-লালমনিরহাট রুটের লালমনি এক্সপ্রেস (৭৫১/৭৫২), চট্টগ্রাম-সিলেট-চট্টগ্রাম রুটের উদয়ন ও পাহাড়িকা এক্সপ্রেস (৭২৩/৭২০) এবং ঢাকা-খুলনা রুটের চিত্রা এক্সপ্রেস (৭৬৩/৭৬৪) ট্রেনগুলো। আর ৩ জুন থেকে চলাচলকারী ১১ জোড়া ট্রেনের মধ্যে রয়েছে ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ বাজার রুটের তিস্তা এক্সপ্রেস (৭০৭/৭০৮), ঢাকা-বেনাপোল রুটের বেনাপোল এক্সপ্রেস (৭৯৫/৭৯৬), ঢাকা-চিলাহাটি রুটের নীলসাগর এক্সপ্রেস (৭৬৫/৭৬৬), খুলনা-চিলাহাটি রুটের রূপসা এক্সপ্রেস (৭২৭/৭২৮), খুলনা-রাজশাহী রুটের কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস (৭১৫/৭১৬), রাজশাহী-গোয়ালন্দঘাট রুটের মধুমতি এক্সপ্রেস (৭৫৫/৭৫৬), চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রুটের মেঘনা এক্সপ্রেস (৭২৯/৭৩০), ঢাকা-কিশোরগঞ্জ রুটের কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস (৭৮১/৭৮২) এবং ঢাকা-নোয়াখালী রুটের উপকূল এক্সপ্রেস (৭১১/৭১২), ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ বাজার রুটের ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস (৭৪৩/৭৪৪) এবং ঢাকা-কুড়িগ্রাম রুটের কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস (৭৯৭/৭৯৮) ট্রেনগুলো। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট এএমএম শাহনেওয়াজ বণিক বার্তাকে বলেন, নতুন করে আরো যাত্রীবাহী ট্রেন চালানোর কথা শুনেছি। তবে এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ৩১ মে থেকে চালু হওয়া ট্রেনগুলোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিরাপদ চলাচল পর্যালোচনা করা হচ্ছে। যেসব ট্রেনের যাত্রী সংখ্যা কম কিংবা যেসব ট্রেনের যাত্রী চাপ বেশি, সেগুলো বিবেচনায় এনে নতুন করে ট্রেন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত আসতে পারে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে মন্ত্রণালয় ও রেলভবনের। নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের সময় সীমিত পরিসরে চলাচলরত ট্রেনগুলোর জন্য যাত্রীদের কঠোর স্বাস্থ্য নির্দেশনা পরিপালনের নির্দেশনা রয়েছে। তবে অধিকাংশ ট্রেনেই স্বাস্থ্যবিধি পরিপালনের বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। রেল স্টেশনে যাত্রীদের হাত ধোয়া, মাস্ক ও হ্যান্ড গ্লাভস পরাসহ বিভিন্ন নির্দেশ থাকলেও অনেক যাত্রী এসব নিয়ম মানতে চাইছে না। বিষয়টি নিয়ে করণীয় নির্ধারণে রেলের পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো থেকে পৃথক দুটি চিঠি দেয়া হয়েছে রেলভবনে। তবে যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলায় বাধ্য করতে সুনির্দিষ্ট সমাধান বের করতে পারেনি রেল কর্তৃপক্ষ। জানতে চাইলে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বণিক বার্তাকে বলেন, তৃতীয় পর্যায়ে শিগগিরই আরো বেশকিছু ট্রেন চালানো হতে পারে। এজন্য উভয় অঞ্চল থেকে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ট্রেনের নাম প্রস্তাব এসেছে। এ ট্রেনগুলো চালানোর জন্য প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। বর্তমানে শতভাগ অনলাইন টিকিট বিক্রি হলেও কাউন্টার সার্ভিসও খুলে দেয়া হবে। তবে আগের মতো স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রি বন্ধ থাকবে। অনলাইনের ক্ষেত্রে আগে কোটা থাকলেও নতুন নিয়মে অনলাইন/স্টেশন কাউন্টার সমান্তরালে টিকিট বিক্রি হবে। যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন ছাড়াও বেশকিছু নতুন নির্দেশনা আসবে। সূত্র:বণিক বার্তা, জুন ১৩, ২০২০


স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদে ট্রেন চালানোর প্রস্তুতি রেলওয়ের

সুজিত সাহা : নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গত ২৬ মার্চ থেকে সারা দেশে সাধারণ ছুটি চলছে। এর আগে ২৪ মার্চ সন্ধ্যা থেকেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার লক্ষ্যে সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। খাদ্যশস্য, জ্বালানি…