শিরোনাম

৪৬% বাড়তি ব্যয়ে ৭০টি ইঞ্জিন কিনবে রেলওয়ে

৪৬% বাড়তি ব্যয়ে ৭০টি ইঞ্জিন কিনবে রেলওয়ে

ইসমাইল আলী:

যাত্রীচাহিদা মেটাতে অবশেষে ৭০টি মিটারগেজ ইঞ্জিন কিনছে রেলওয়ে। কোরিয়ার হুন্দাই রোটেম থেকে ইঞ্জিনগুলো কেনায় ব্যয় হবে এক হাজার ৯০৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকা, যদিও এ মূল্য প্রাক্কলিত দরের চেয়ে ৪৬ শতাংশ বেশি। আবার সরবরাহকারীর ঋণে (সাপ্লায়ার্স ক্রেডিট) ইঞ্জিনগুলো কেনায় অর্থায়নের ব্যবস্থাও করছে হুন্দাই রোটেম। আর কঠিন শর্তের এ ঋণে গুনতে হবে উচ্চ হারে সুদ।

সম্প্রতি ইঞ্জিনগুলো কেনার প্রস্তাব পাঠানো হয় সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে। তবে সর্বনিম্ন দরদাতা কোম্পানির নাম পরিবর্তিত হওয়ায় তা ফেরত দিয়েছে ক্রয় কমিটি। এক্ষেত্রে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা কোম্পানিকে কাজটি দেওয়া হচ্ছে।

এ-সংক্রান্ত সংশোধিত প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে রেলওয়ে। এতে বলা হয়েছে, রেলওয়ের চাহিদা মেটাতে ২০১১ সালে ৭০টি মিটারগেজ ইঞ্জিন কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর মধ্যে ৩০টি সম্পূর্ণ অবস্থায়, ২৫টি অর্ধেক খোলা ও ১৫টি সম্পূর্ণ খোলা অবস্থায় আনা হবে। এক্ষেত্রে অর্ধেক ও সম্পূর্ণ খোলা ইঞ্জিনগুলো দেশের ওয়ার্কশপে সংযোজন করে পূর্ণাঙ্গ ইঞ্জিনে রূপ দেওয়া হবে। এজন্য তিন দফা দরপত্র আহ্বান করা হয়। তবে উপযুক্ত প্রস্তাব না পাওয়ার প্রথম দুবার দরপত্র বাতিল করা হয়।

৭০টি ইঞ্জিন কেনায় সর্বশেষ আহ্বান করা দরপত্রে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। এর মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার হুন্দাই রোটেম ও স্পেনের ভসলো এসপানা কারিগরিভাবে যোগ্য বিবেচিত হয়। এদের আর্থিক প্রস্তাবনা যাচাই করে দেখা যায়, ইঞ্জিনগুলোর জন্য হুন্দাই রোটেম দর প্রস্তাব করেছে প্রায় ২৩ কোটি ৬২ লাখ ডলার বা এক হাজার ৮৩৭ কোটি এক লাখ টাকা। আর ভসলো এসপানা প্রস্তাব করে ২১ কোটি ৪৭ লাখ ইউরো বা এক হাজার ৮৩৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ সর্বনিম্ন দরদাতা ভসলো এসপানা।

প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, ২০১৫ সালে দরপত্র আহ্বানের সময় ইঞ্জিনগুলোর দাফতরিক মূল্য প্রাক্কলন করা হয় এক হাজার ৫১৬ কোটি ২২ লাখ টাকা। অর্থাৎ দাফতরিক মূল্যের চেয়ে সর্বনিম্ন দরদাতা ৩২০ কোটি ৭৯ লাখ টাকা বা ২১ দশমিক ১৫ শতাংশ বেশি দাম প্রস্তাব করে।

এদিকে সর্বনিম্ন দরদাতা ভসলো এসপানার নাম এরই মধ্যে পরিবর্তিত হয়ে স্ট্যাডলার রেল ভ্যালেন্সিয়া হয়েছে। গত বছর ১৭ ডিসেম্বর নাম পরিবর্তনের প্রামাণক দলিল রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) পাঠানো হয়। পরে এ বিষয়ে সিপিটিইউ, রেলওয়ে ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। আর ৭ ফেব্রুয়ারি প্রস্তাবটি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে পাঠানো হয়।

যদিও নাম পরিবর্তনের প্রস্তাবের বিষয়টি গ্রহণ না করে ফেরত পাঠায় ক্রয় কমিটি। এক্ষেত্রে দ্বিতীয় সর্বনি¤œ দরদাতাকে কাজটি দেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়। এরই মধ্যে ডলারের বিনিময় হার পরিবর্তন হওয়ায় ৭০টি ইঞ্জিন কেনায় এখন দাম পড়বে এক হাজার ৯০৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। তবে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনায় (ডিপিপি) ইঞ্জিনগুলো কেনায় ব্যয় ধরা হয়েছিল এক হাজার ৩০৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। এ হিসাবে ডিপিপির মূল্যের চেয়ে ৬০০ কোটি ৮১ লাখ টাকা বা ৪৬ শতাংশ বেশি দরে ইঞ্জিনগুলো কেনা হবে।

জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক আবদুল মতিন চৌধুরী শেয়ার বিজকে বলেন, ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি বেশকিছু নির্দেশনা দিয়ে প্রস্তাবটি ফেরত দিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রস্তাবটি সংশোধন করা হচ্ছে। শিগগিরই তা অনুমোদনের জন্য ক্রয় কমিটিতে আবার পাঠানো হবে।

প্রস্তাবে আরও বলা হয়, ৭০টি ইঞ্জিনের মধ্যে ৩০টি পূর্ণাঙ্গ, ২৫টি আংশিক খোলা ও ১৫টি সম্পূর্ণ খোলা অবস্থায় কেনা হবে। আংশিক ও সম্পূর্ণ খোলা ইঞ্জিনগুলো পাবর্তীপুরের কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানায় সংযোজন করা হবে। এজন্য দাম কিছুটা কম পড়বে বলে ধরা হয়েছিল। যদিও রেলওয়ে এর আগে আংশিক বা সম্পূর্ণ খোলা ইঞ্জিন ক্রয় করেনি। এ কারণে ডিপিপিতে অনুমাননির্ভর মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। সর্বশেষ ক্রয়মূল্য এক্ষেত্রে বিবেচনা করা হয়নি।

পূর্ণাঙ্গ ইঞ্জিনের এককপ্রতি দাম এক্ষেত্রে ধরা হয় ২২ কোটি টাকা, আংশিক খোলা ১৫ কোটি ৬০ লাখ ও সম্পূর্ণ খোলা ইঞ্জিনের দাম ১৪ কোটি টাকায় ধরা হয়। তবে হুন্দাই রোটেম এসব ইঞ্জিনের দাম প্রস্তাব করে যথাক্রমে ৩৩ লাখ ৯৫ হাজার, ৩২ লাখ ও ৩১ লাখ ৮৪ হাজার ডলার। আর ইঞ্জিনগুলোর গড় দাম ধরা হয়েছে ৩২ লাখ ৬০ হাজার ডলার। এটি ডিপিপিতে উল্লিখিত দরের চেয়ে বেশি হলেও সর্বশেষ কেনা ইঞ্জিনের চেয়ে কম। কারণ ২০১১ সালে সর্বশেষ কেনা ইঞ্জিনের দাম পড়েছিল ভ্যাট-শুল্ক ছাড়া ২৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা।
যদিও ইঞ্জিনগুলো কেনার জন্য নেওয়া হবে কঠিন শর্তের ঋণ। এজন্য গুনতে হবে উচ্চ হারে সুদ। এ বিষয়ে এরই মধ্যে ইআরডির মতামত নেয়া হয়।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আমজাদ হোসেন বলেন, বাজার দরের চেয়ে অনেক কমে ইঞ্জিনগুলোর দাম প্রস্তাব করেছে সরবরাহকারী কোম্পানি দুটি। আর সুদের হার দেখার বিষয় ইআরডির। তাদের সুপারিশ ও ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই প্রস্তাবটি চূড়ান্ত করা হয়েছে।

 সুত্র:শেয়ার বিজ

About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.