ইসমাইল আলী: ২০০৫ সালে তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা তার স্ত্রীর মালিকানাধীন মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থাকে রেলওয়ের দশমিক ২৫ একর জমি বরাদ্দ দেন। সচিবালয়ের পাশে অবস্থিত সে জমির বাজারমূল্য ছিল কয়েক কোটি টাকা। যদিও মাত্র পাঁচ হাজার টাকায় সে জমি বরাদ্দ দিয়ে বিতর্কিত ও সমালোচিত হন নাজমুল হুদা। এরপর প্রতীকী মূল্যে রেলের জমি বরাদ্দ বন্ধ রাখা হয়েছিল কিছুদিন। তবে পরবর্তী সময়ে আবারও রেলের জমি প্রতীকী মূল্যে বরাদ্দ দেওয়া শুরু হয়।
সম্প্রতি ঢাকায় মেট্রোরেল নির্মাণের জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ে থেকে দশমিক ৩৩ একর জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়। এজন্য ১০০ কোটি টাকা মূল্য চেয়েছিল রেলওয়ে। যদিও মাত্র এক লাখ টাকায় জমিটি বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর আগে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু নির্মাণে নারায়ণগঞ্জে ১১ দশমিক শূন্য দুই একর জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতরকে। জমির মূল্য ১০০ কোটি টাকার বেশি হলেও মাত্র এক কোটি টাকায় তা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পেই নয়, বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেও নামমাত্র মূল্যে বিভিন্ন সময়ে জমি বরাদ্দ দিয়েছে রেলওয়ে। অনেক সময় রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের ভর্তিতে কোটা সুবিধার বিনিময়েও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে জমি দেওয়া হয়েছে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর আগে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রকল্পে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (রাজউক) চার দফা জমি দেয় রেলওয়ে। তবে প্রতিবারই বাণিজ্যিক দরে জমি দেওয়া হয়েছিল। এ ধারা অব্যাহত রাখা উচিত ছিল। কারণ উন্নয়ন প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণে পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখা হয়। এছাড়া রেলওয়েকেও বিভিন্ন প্রকল্পে বাজারদরে জমি অধিগ্রহণ করতে হয়। তাই অন্যান্য সংস্থাকে প্রতীকী মূল্যে বরাদ্দ দেওয়ায় আয় বঞ্চিত হচ্ছে রেলওয়ে।
প্রতিবেদনের তথ্যমতে, শীতলক্ষ্যা সেতু ছাড়াও নারায়ণগঞ্জে সড়ক নির্মাণের বিভিন্ন প্রকল্পে সওজকে ১৮ একর জমি দিয়েছে রেলওয়ে। এর প্রতীকী মূল্য ছিল মাত্র এক লাখ টাকা। যদিও বাজারদরে এসব জমির দাম পড়বে ১০০ কোটি টাকার বেশি। এছাড়া সিদ্ধিরগঞ্জ পৌরসভাকে দশমিক ৫০ একর জমি দেওয়া হয়েছে ৫০ হাজার টাকায় ও শিক্ষা বোর্ডকে তিন দশমিক ৪৮ একর জমি দেওয়া হয়েছে দুই কোটি টাকায়।
এর বাইরে চট্টগ্রামে বিশ্ব বাণিজ্যকেন্দ্র নির্মাণে দশমিক ৬১ একর জমির প্রতীকী মূল্য নেওয়া হয় ৫০ লাখ টাকা, বিজিএমইএকে দশমিক ৩৫ একর জমি দেওয়া হয় এক লাখ টাকায় ও চট্টগ্রামে ইসলামিক মেডিক্যাল মিশন ইউএসটিসিকে এক দশমিক ৫৭ একর জমি দেওয়া হয়েছে মাত্র ৯৪ হাজার ২০০ টাকায়। এর আগেও তিন দফা ইউএসটিসিকে তিন দশমিক ৭৮ ও দুই দশমিক ৪৩ একর জমি দেওয়া হয়। এগুলোর মূল্য ছিল যথাক্রমে পাঁচ টাকা ও ১০ হাজার টাকা।
এদিকে কিডনি ফাউন্ডেশনকে দুই দফায় এক দশমিক ২১ একর জমি দেওয়া হয়েছে। এতে দাম নেওয়া হয় ১১ হাজার টাকা। এছাড়া বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতিকে দেওয়া এক একর জমির মূল্য রাখা হয় পাঁচ হাজার টাকা, বাংলাদেশে মানসিক প্রতিবন্ধী কল্যাণ ও শিক্ষা সমিতিকে দেওয়া দশমিক ৩২ একর জমির মূল্য রাখা হয় দুই হাজার ৫০০ টাকা এবং সোসাইটি ফর অ্যাসিসট্যান্ট টু হিয়ারিং ইম্পেয়ার্ড চিলড্রেনকে দেওয়া দশমিক ৬০ একর জমির মূল্য রাখা হয় তিন হাজার টাকা। এর বাইরেও আরও ২২টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে জমি দিয়েছে রেলওয়ে।
জানতে চাইলে রেলপথ সচিব মো. মোফাজ্জেল হোসেন শেয়ার বিজকে বলেন, মেট্রোরেল প্রকল্পের জন্য রেলওয়ে জমির মূল্য বাবদ অনেক টাকা দাবি করেছিল। তখন আমি নিজেই মেট্রোরেল প্রকল্পের পরিচালক ছিলাম। দুটোই যেহেতু সরকারি সংস্থা তাই রেলওয়েকে অনুরোধ করা হয় প্রতীকী মূল্যে জমি দিতে। দুই পক্ষের সমঝোতার ভিত্তিতে জমি নেওয়া হয়। সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের ক্ষেত্রেই এ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে। তবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে এখন আর জমি দেওয়া হচ্ছে না।
সুত্র:শেয়ার বিজ, জানুয়ারি ২১, ২০১৮