শিরোনাম

পদ্মা সেতুর সঙ্গে রেল সংযোগ কাজের সমন্বয় নিয়ে শঙ্কা

পদ্মা সেতুর সঙ্গে রেল সংযোগ কাজের সমন্বয় নিয়ে শঙ্কা

শামীম রাহমান :

পদ্মা সেতুর কাজ এগিয়ে চলছে। কিন্তু ঋণচুক্তির কারণে এখনো শুরু করা যায়নি রেল সংযোগের মূল কাজ। এ অবস্থায় সেতুর সঙ্গে রেল সংযোগ কাজের সমন্বয় নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা বলছেন, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ দিতে দুই পাশের লাইনের আগে সেতুর গ্রিডের ওপর লাইন বসানোর কথা। যদি এমনটি করা সম্ভব না হয়, তবে দুই পাশের লাইনগুলো সেতুতে সংযোগের সময় জটিলতা দেখা দিতে পারে। এ অবস্থায় দুই পাশের লাইন স্থাপনের আগে সেতুর ওপর লাইন স্থাপন করাকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন তারা।

১২ অক্টোবর অনুষ্ঠিত সরকারের ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পের মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভাতেও এসব বিষয় উঠে এসেছে। এতে সেতুর ওপর রেললাইন স্থাপনসহ মোট আট চ্যালেঞ্জের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে— পদ্মা সেতুর ভায়াডাক্টের (উড়ালপথ) সঙ্গে সঙ্গে রেলওয়ে ভায়াডাক্ট নির্মাণ, ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা মহাসড়কের চার লেনের কাজের সঙ্গে মিল রেখে একই অংশে রেললাইন নির্মাণ ও পদ্মা-জশলদিয়া পানি শোধনাগারের পাইপলাইন নির্মাণকাজের সঙ্গে রেল সংযোগ প্রকল্পকাজের সমন্বয়। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দ্রুত প্রকল্পের কাজ শুরুর কথা বলা হয়েছে সভায়।

ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা মহাসড়কে মোট চারটি রেল ওভারপাস হবে। মহাসড়কটির চার লেনে উন্নীতের কাজ চলমান। এসব রেল ওভারপাসের সঙ্গে রেল সংযোগকাজের সমন্বয় সড়কটিতে যান চলাচল শুরুর আগেই করতে হবে। এটিকেও পদ্মা সেতু রেল সংযোগ বাস্তবায়নে অন্যতম চ্যালেঞ্জ মনে করা হচ্ছে।

সভায় বলা হয়েছে, ঋণচুক্তি নিয়ে দীর্ঘসূত্রতার কারণে এরই মধ্যে পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পের মেয়াদের এক বছরের বেশি শেষ হয়েছে। এ অবস্থায় নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়নকে চ্যালেঞ্জ মনে করা হচ্ছে।

সভায় আরো বলা হয়েছে, তিনটি কারণে প্রকল্পের ব্যয় বাড়তে পারে। এর মধ্যে প্রথম কারণ হলো প্রস্তাবিত স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল আইন, ২০১৬। পূর্বের আইনে অধিগ্রহণকৃত ভূমির পরিপ্রেক্ষিতে বাজারমূল্যের ৫০ শতাংশ বেশি মূল্য পরিশোধের কথা থাকলেও নতুন আইনে এটি বাজারমূল্যের ২০০ শতাংশ ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে তা বাজারমূল্যের ৩০০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। তাই আইনটি বাস্তবায়ন হলে এ কারণে প্রকল্পের ব্যয় বাড়তে পারে। একইভাবে ভ্যাট নিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নতুন প্রজ্ঞাপনের কারণেও ব্যয় বাড়তে পারে। ব্যয় বৃদ্ধির সর্বশেষ কারণ হিসেবে প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। এটিকেও একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে রেলওয়ে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক আমজাদ হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘প্রকল্পের কাজ এখনো শুরু হয়নি। এ অবস্থায় আপাতত ব্যয় বৃদ্ধির সম্ভাবনা নেই।’

ভূমি অধিগ্রহণ খাতে ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্রকল্পের অধিগ্রহণকৃত বেশির ভাগ জমি আমরা বুঝে পেয়েছি। সেগুলো আগের আইন অনুযায়ীই অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে নতুন অধিগ্রহণ আইন তেমন প্রভাব ফেলবে না।’ কাস্টমস ও ভ্যাটের নতুন প্রজ্ঞাপন সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এখানে দেখতে হবে কোন কোন পণ্য আমদানিতে কাস্টমস ডিউটি (সিডি) ও ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে। এক্ষেত্রে কী পরিমাণ ব্যয় বাড়বে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।’ নির্ধারিত সময়েই পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

ঋণচুক্তির শর্ত অনুযায়ী, উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) সংশোধন করা হতে পারে। এটিকেও চ্যালেঞ্জ মনে করছে রেলওয়ে। আর প্রকল্প বাস্তবায়নে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ মনে করা হচ্ছে, চায়না এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে দ্রুত ঋণচুক্তি সম্পন্ন করার বিষয়টিকে। এটি না হওয়া পর্যন্ত প্রকল্পের মূল কাজই শুরু করতে পারছে না রেলওয়ে।

এ সম্পর্কে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের পরিচালক গোলাম ফখরুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা ঋণচুক্তি সম্পন্নের খুব কাছাকাছি চলে এসেছি। এরই মধ্যে চায়না এক্সিম ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ আমাদের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। কয়েক দিনের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে ঋণচুক্তি সম্পন্ন হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘ঋণচুক্তি সম্পন্ন হলেই প্রকল্পের কাজ পুরোদমে শুরু হবে। আমরা প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শেষ করতে চাই। এজন্য এখন থেকে প্রয়োজনীয় কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করছি।’

উল্লেখ্য, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ ২ হাজার ৮৫৩ কোটি ২৬ লাখ, সিডি ও ভ্যাট বাবদ ২ হাজার ৩৫১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয় হবে। নির্মাণকাজে ব্যয় হবে প্রায় ২৭ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা। এ প্রকল্পে ২৪ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা ঋণ দিতে সম্মত হয়েছে চায়না এক্সিম ব্যাংক।

সুত্র:বর্ণিক বার্তা,অক্টোবর ১৬, ২০১৭


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.