ইসমাইল আলী:
বর্তমানে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে ৯৩৩টি মিটারগেজ যাত্রীবাহী কোচ রয়েছে। এরই মধ্যে আয়ুষ্কাল পেরিয়ে গেছে ৪৯২টির। তবে জনবল ঘাটতি ও অপ্রতুল বাজেটের কারণে কোচ মেরামতও ব্যাহত হচ্ছে। এজন্য আয়ুষ্কাল পেরিয়ে যাওয়া বেশকিছু কোচ পুনর্বাসনের (বড় ধরনের মেরামত) উদ্যোগ নিয়েছে রেলওয়ে। যদিও এ-সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
তথ্যমতে, ৫০টি ব্রডগেজ ও ৫০টি মিটারগেজ কোচ পুনর্বাসনে (মেরামতে) সম্প্রতি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) চূড়ান্ত করেছে রেলওয়ে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪৭ কোটি ১৭ লাখ টাকা। শিগগিরই তা পাঠানো হবে পরিকল্পনা কমিশনে। চলতি বছর শুরু করে ২০২১ সালের জুনে প্রকল্পটি শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। সৈয়দপুর ওয়ার্কশপে কোচগুলো মেরামত করা হবে।
যদিও বর্তমানে চলমান একই ধরনের আরেকটি প্রকল্পের অধীনে ৫০টি ব্রডগেজ ও ৫০টি মিটারগেজ কোচ মেরামত করছে রেলওয়ে। এতে ব্যয় হয়েছে ৭১ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এ হিসেবে প্রস্তাবিত প্রকল্পে ব্যয় দাঁড়িয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি।
ডিপিপি বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৫০টি ব্রডগেজ কোচের জন্য এককপ্রতি মেকানিক্যাল কাঁচামাল আমদানি ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৭ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। এ কোচগুলোর জন্য এককপ্রতি ইলেকট্রিক্যাল কাঁচামাল কেনায় ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৫ লাখ ১৮ হাজার টাকা। যদিও চলমান প্রকল্পে এ দুই খাতে ব্যয় হচ্ছে যথাক্রমে ৭০ লাখ ও পাঁচ লাখ ৭৩ হাজার টাকা।
এদিকে ৫০টি মিটারগেজ কোচের জন্য এককপ্রতি মেকানিক্যাল কাঁচামাল আমদানি ব্যয় ধরা হয়েছে ৬২ লাখ ৪৬ হাজার আগে। এ কোচগুলোর জন্য এককপ্রতি ইলেকট্রিক্যাল কাঁচামাল কেনায় ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ লাখ ৫৩ হাজার টাকা। যদিও চলমান প্রকল্পে এ দুই খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে যথাক্রমে ৫২ লাখ ১৪ হাজার ও চার লাখ ৪৯ হাজার টাকা। এর বাইরে প্লান্ট ও মেশিনারি কেনায়ও ব্যয় বেড়ে গেছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের মেকানিক্যাল বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে শেয়ার বিজকে বলেন, ২০১৪ সালে নেওয়া প্রকল্পটি চলতি বছর শেষ হচ্ছে। আর নতুন প্রকল্পটি চলতি বছর শুরু হবে, যা শেষ হবে ২০২১ সালে। এজন্য পাঁচ শতাংশ হারে মূল্যস্ফীতি বিবেচনা করা হয়েছে। এছাড়া চলমান প্রকল্পে কোচ পুনর্বাসনে এমএস (মাইল্ড স্টিল) শিট ব্যবহার করা হচ্ছে। আর নতুন প্রকল্পে কোচ পুনর্বাসনে এসএস (স্টেইনলেস স্টিল) সিট ব্যবহার করা হবে। এতে অনেকটা খরচ বেড়ে যাবে।
তিনি আরও জানান, চলমান প্রকল্পে সাতটি পাওয়ার কার পুনর্বাসন করা হয়। আর নতুন প্রকল্পে ২৮টি পাওয়ার কার পুনর্বাসন করা হবে। এতে কোচগুলোতে ব্যবহার করা ফ্যান ও লাইটগুলোর যথাযথ ব্যবহার করা যাবে। এ খাতেও ব্যয় বেশি হচ্ছে।
যদিও একই ধরনের অন্য প্রকল্পে ব্যয় আরও কম বলে সূত্রে জানা গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সৈয়দপুর ওয়ার্কশপে রেলওয়ের ১০০টি মিটারগেজ কোচ মেরামতে একটি প্রকল্প নেওয়া হয় ২০১৬ সালে। ৫৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রকল্পটি শেষ হবে ২০১৯ সালে। এতে কোচপ্রতি মেরামত ব্যয় হচ্ছে ৪৮ লাখ ৮১ হাজার টাকা।
এর আগেও ২০১৩ সালে ২৬০টি কোচ বেসরকারি খাতে মেরামত করে রেলওয়ে। এর মধ্যে ছিল ২০০টি মিটারগেজ ও ৬০টি ব্রডগেজ কোচ। ২০১৫ সালে শেষ হওয়া প্রকল্পটিতে ব্যয় করা হয় ১২১ কোটি ১১ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে এককপ্রতি ব্যয় হয়েছে ৪৭ লাখ টাকা। এছাড়া ২০০৭ সালে বেসরকারি খাতে ২৫৮টি মিটারগেজ ও ১১০টি ব্রডগেজ কোচ মেরামত করা হয়। সে প্রকল্পে ব্যয় আরও কম পড়েছিল।
প্রকল্প প্রস্তাবনামতে, বর্তমানে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে ৯৩৩টি মিটারগেজ যাত্রীবাহী কোচ রয়েছে। এর মধ্যে ৪৯২টির আয়ুষ্কাল পেরিয়ে গেছে। ফলে বাকি কোচগুলোর মধ্যে ৪৫০টি ওভারডিউ (অতিরিক্ত) শিডিউলে চলাচল করছে। তবে রেলওয়ের সৈয়দপুর ওয়ার্কশপে ৫৬ ও পাহাড়তলিতে ৪০ শতাংশ জনবল ঘাটতি থাকায় কোচগুলো মেরামত করা যাচ্ছে না। পাশাপাশি ওয়ার্কশপগুলোতে বাজেট বরাদ্দও অপ্রতুল। ফলে কোচগুলো অকেজো বসে আছে। এজন্য উন্নয়ন খাতে প্রকল্পটি নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আমজাদ হোসেন শেয়ার বিজকে বলেন, বর্তমানে রেলওয়ের ৪৫০টি মিটারগেজ ও ১২৫টি ব্রডগেজ কোচ মেরামতের অপেক্ষায় আছে। তবে এগুলো মেরামতের সক্ষমতা রেলওয়ের নেই। ওয়ার্কশপ দুটির যন্ত্রপাতি অনেক পুরোনো হয়ে গেছে, নেই প্রয়োজনীয় লোকবল ও বাজেট বরাদ্দ। তাই সরকারি বরাদ্দে উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কোচগুলো মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সুত্র:শেয়ার বিজ, আগস্ট ৭, ২০১৮