মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন :
ঢাকা থেকে কুমিল্লা ও লাকসাম হয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্ত উচ্চগতির রেলপথ নির্মাণে চীনের রাষ্ট্র মালিকানার এক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সই হওয়া সমঝোতা স্মারকের (এমওইউ) বৈধতা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে দেশটির সরকার। গত ৬ নভেম্বর চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (ইন্টারন্যাশনাল) লিমিটেডের (সিআরসিসিআই) সঙ্গে বাংলাদেশ রেলওয়ের এ সমঝোতা স্মারক সই হয়। এমওইউতে বলা হয়, চীন সরকারের অর্থায়নে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে। সম্প্রতি ঢাকায় চীন দূতাবাসের ইকোনমিক অ্যান্ড কমার্শিয়াল কাউন্সিলরের কার্যালয় থেকে এই এমওইউর বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, নিয়ম অনুয়ায়ী যে কোনো আন্তর্জাতিক সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার আগে অবশ্যই চীন সরকারকে অবহিত করতে হয়। চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত কোনো প্রতিষ্ঠানের জি টু জি (দুই দেশের সরকারি পর্যায়ে) পদ্ধতিতে অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার অধিকার নেই। এ কারণে চীন সরকার এই এমওইউকে বৈধতা দিতে পারে না। চীন সরকারে নমনীয় ঋণ ও সরবরাহকারী ঋণের বিধি লঙ্ঘন হওয়ায় এই সমঝোতা স্মারক বাতিল করা উচিত। একই সঙ্গে আগামীতে এ সমঝোতায় উদ্যোগ নেওয়ার আগে দুই দেশের জি টু জি অর্থায়ন-সংক্রান্ত নীতিমালা অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে এবং সিআরসিসিআইর মধ্যে যে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে তার মেয়াদ কার্যকর থাকবে ১৮ মাস। তবে এর মেয়াদ বাড়বে কি-না সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে দুই সংস্থা। এ ছাড়া কাজে অসন্তুষ্ট হলে যে কোনো পক্ষই সমঝোতা থেকে বের হয়ে যেতে পারবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অতিরিক্ত সচিব জাহিদুল হক সমকালকে বলেন, এ-সংক্রান্ত চিঠি ইআরডি ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও রেলপথ মন্ত্রণালয়কেও দেওয়া হয়েছে। চীনা দূতাবাস থেকে বলা হয়েছে, এই সমঝোতা স্মারক সই করা ঠিক হয়নি। তিনি আরও বলেন, রেলওয়ে থেকে এ সমঝোতা স্মারকের বিষয়ে ইআরডিকে কিছুই জানানো হয়নি। চীনা দূতাবাস থেকে চিঠি পাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেও এ সম্পর্কে ইআরডির কাছে জানতে চেয়েছে।
সংশ্নিষ্টরা জানান, বাংলাদেশের বিভিন্ন নির্মাণ কাজে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এক ধরনের প্রতিযোগিতা রয়েছে। এ কারণে তাড়াহুড়া করে নিয়ম না মেনে কেউ কেউ এ ধরনের এমওইউ সই করে।
রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, চীনের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে তা মানতে হবেই- এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। যে কোনো সময় এ সমঝোতা থেকে বের হয়ে যাওয়া যাবে। তবে উচ্চগতির রেল চালু করতে এ ধরনের কোম্পানি আর নাও পাওয়া যেতে পারে। এ কারণে চীন সরকার একে গুরুত্ব দিয়ে কাঠামোর মধ্যে নিয়ে এলে দু’পক্ষের জন্যই ভালো হবে।
ঢাকা থেকে সরাসরি কুমিল্লা ও লাকসাম হয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্ত দ্রুতগতির রেলপথ নির্মাণের প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম রেলপথের বর্তমান দূরত্ব ৩২১ কিলোমিটার থেকে ৯০ কিলোমিটার কমে যাবে। অর্থাৎ রুটের দৈর্ঘ্য হবে ২৩১ কিলোমিটার। ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটার গতির ট্রেন চালানোর মাধ্যমে মাত্র দেড় থেকে দুই ঘণ্টায় ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়া যাবে। এতে দ্রুত যাত্রী ও পণ্য পরিবহন করা সম্ভব হবে।
দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে এ রেল যোগাযোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ কারণে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সুত্র:সমকাল, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮,