।।নিউজ ডেস্ক।।
সীমিত পরিসরে বর্তমানে ১৯টি ট্রেন পরিচালনা করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। দীর্ঘ দুই মাসের বেশি বন্ধ থাকার পর গত ৩১ মে যখন প্রথম দফায় আটটি ট্রেন চলাচল শুরু হয়, তখন টিকিটের জন্য বলতে গেলে হাহাকার লেগে গিয়েছিল। অনলাইনে টিকিট বিক্রি কার্যক্রম শুরুর ১ ঘণ্টার মধ্যেই শেষ হয়ে যেত সব টিকিট। কালোবাজারে টিকিট বিক্রির অভিযোগও ছিল সে সময়। তবে ১৫ দিন পার হতেই বদলে গেছে সেই চিত্র। কোনো কোনো রুটে একেবারেই যাত্রী হচ্ছে না। এমন পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে একটি ট্রেন বন্ধ করে দেয়ার পরিকল্পনা করছে রেলওয়ে।
নভেল করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে গত ২৬ মার্চ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়েছিল যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল। ৩১ মে থেকে আট জোড়া ট্রেন সীমিত পরিসরে পরিচালনা শুরু হয়। ৩ জুন পরিচালনায় যোগ দেয় আরো ১১ জোড়া ট্রেন। প্রতিটি ট্রেনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক টিকিট বিক্রি করে আসছে রেলওয়ে। টিকিট বিক্রির পুরো প্রক্রিয়াটি চলছে অনলাইনে। চলাচলের সময় রুটে থাকা বিভিন্ন স্টেশনের যাত্রাবিরতির পরিমাণ কমিয়ে দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে দুটি ট্রেন পরিচালিত হচ্ছে। সকাল ৭টায় ঢাকা থেকে ছেড়ে যাচ্ছে আন্তঃনগর সোনার বাংলা এক্সপ্রেস। একইভাবে বিকাল সাড়ে ৪টায় ঢাকা থেকে ছেড়ে যাচ্ছে আন্তঃনগর সুবর্ণ এক্সপ্রেস। দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রেল রুটটি প্রত্যাশিত যাত্রী হচ্ছে না। বিপরীতে দুটি ট্রেন পরিচালনা করতে গিয়ে প্রতিদিন মোটা অংকের অর্থ লোকসান হচ্ছে। এমন পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের একটি ট্রেন কমিয়ে ফেলার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
তবে সোনার বাংলা ও সুবর্ণ এক্সপ্রেসের মধ্যে কোন ট্রেনটি বন্ধ হবে, তা গতকাল পর্যন্ত চূড়ান্ত করতে পারেননি রেলওয়ের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, রুটটির দুই প্রান্ত থেকে দুদিক দিয়েই যাত্রীর চাহিদা রয়েছে। এমন অবস্থায় কোন ট্রেনটি বন্ধ হবে, তা নিয়ে রেলওয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করছে। তবে আজই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে জানিয়েছে রেল ভবনের একটি সূত্র।
এদিকে একটি নয়, দুটি রুটে ট্রেন কমানোর পরিকল্পনার কথা গতকাল বণিক বার্তাকে জানিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. শামছুজ্জামান বণিক বার্তাকে বলেন, ৩১ মে থেকে আমরা যখন সীমিত পরিসরে কয়েকটি ট্রেন চালু করি, তখন ট্রেনগুলোতে প্রথম ৮-১০ দিন ভালোই যাত্রী হচ্ছিল। কিন্তু কয়েকদিন ধরে কিছু ট্রেনে একেবারেই যাত্রী হচ্ছে না। এর মধ্যে সবচেয়ে কম যাত্রী হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-ময়মনসিংহের মধ্যে। আমরা এখনো ট্রেনগুলোতে যাত্রীর পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করছি। আমরা এ দুই রুটে একটা একটা করে দুটো ট্রেন কমাতে পারি। তবে এখনো এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। আমরা ট্রেনের সংখ্যা বাড়াতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বিদ্যমান করোনা পরিস্থিতির কারণে সেটা তো সম্ভব হয়ইনি, উল্টো এখন ট্রেন কমানোর ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করতে হচ্ছে। তবে পরিস্থিতি যদি ট্রেন চলাচলের উপযোগী হয়, তাহলে আরো নতুন ট্রেন চালু করা হবে বলে এ সময় জানান তিনি।
শুধু ট্রেন নয়, যাত্রী সংকট রয়েছে নৌ ও সড়কপথেও। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) তথ্য বলছে, বর্তমানে ঢাকার সদরঘাট থেকে ৫৫ থেকে ৬০টি লঞ্চ দেশের বিভিন্ন রুটে যাতায়াত করছে। স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন দেড়শর বেশি লঞ্চ চলাচল করত।
বিআইডব্লিউটিএর সদরঘাট টার্মিনালের যুগ্ম মহাপরিচালক আলমগীর কবির বণিক বার্তাকে বলেন, সাধারণ ছুটির পর যখন লঞ্চ চলাচল শুরু হয়, তখন বেশির ভাগ লঞ্চেই প্রচুর যাত্রী থাকত। বর্তমানে যাত্রীর চাপ তুলনামূলক কম। আগে যেখানে ঢাকা-চাঁদপুর রুটে প্রতি ১ ঘণ্টা পরপর একটি করে লঞ্চ ছেড়ে যেত। আর গতকাল রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত চাঁদপুরের উদ্দেশে সদরঘাট ছেড়েছে মাত্র ১২টি লঞ্চ। শিডিউলে ছিল আরো দুটি। দেশের অন্য নৌরুটেও একই অবস্থা। তবে প্রতিটি লঞ্চেই যাত্রীর সংখ্যা চোখে লাগার মতো কম ছিল বলে জানিয়েছেন তিনি।
লঞ্চে যাত্রী কম থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি মাহবুব উদ্দিন বণিক বার্তাকে বলেন, চালুর পর কিছুদিন তুলনামূলক যাত্রী হতো। কিন্তু এখন অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে লঞ্চ চালিয়ে তেলের টাকাই তুলতে পারছেন না মালিকরা।
একইভাবে যাত্রী সংকটের কথা জানিয়েছেন ঢাকার গণপরিবহন মালিকরাও। তারা বলছেন, সকালে অফিস শুরুর আগে ও অফিস ছুটির পর বাদ দিয়ে দিনের পুরোটা সময় গাড়ির মোট আসনের ১০-১৫ শতাংশ যাত্রী নিয়ে বাস চালাতে হচ্ছে। বাড়তি ভাড়া আদায় করেও বাসের পরিচালন ব্যয় তোলা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তারা। দূরপাল্লার বাসেও আসনের ৫০ শতাংশ যাত্রী না হওয়ার কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও শ্যামলী পরিবহনের মালিক রমেশ চন্দ্র ঘোষ।
সূত্র:বণিক বার্তা, জুন ১৭, ২০২০