আবারও বাড়ছে রেলপথের ভাড়া। উন্নয়ন সহযোগী এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণের শর্ত মেনে ২৫ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে রেলওয়ে। গতকাল শেয়ার বিজে প্রকাশিত এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, গড়ে ২৫ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়েছে। ফলে রেলের কিলোমিটারপ্রতি ভিত্তিভাড়া ৩৯ পয়সা থেকে বেড়ে হবে ৪৯ পয়সা।
যদিও রুটভেদে শোভন চেয়ারে ভাড়া বাড়ছে ২২ থেকে ৪৭ শতাংশ, আর এসি চেয়ারে রুটভেদে ভাড়া বাড়ছে ৩৯ থেকে ৬৪ শতাংশ। এছাড়া যাত্রী পরিবহনে ন্যূনতম ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাবও করা হয়েছে। পাশাপাশি পণ্য পরিবহনের ভাড়া এবং কনটেইনার ও পার্সেল পরিবহন মাশুল বাড়ানোর প্রস্তাবও তৈরি করেছে রেলওয়ে। জানানো হয়, জ্বালানি তেলের দাম, পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচসহ আনুষঙ্গিক বিষয় বিবেচনায় এনে ২৫ শতাংশ ভাড়া বাড়ানো হচ্ছে।
উল্লেখ্য, প্রায় ২০ বছর পর ২০১২ সালে রেলের ভাড়া বাড়ানো হয়। ওই সময়ে রেলের যাত্রী পরিবহনের কিলোমিটারপ্রতি ভিত্তিভাড়া ২৪ থেকে বাড়িয়ে ৩৬ পয়সা করা হয়। ৫০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানো হলেও বিভিন্ন রুটে থাকা ডিসকাউন্ট তুলে দেওয়ায় ভাড়া বেড়েছিল প্রায় শতভাগ। এরপর বাড়ানো হয় ২০১৬ সালে। ওই সময় কিলোমিটারপ্রতি ভিত্তিভাড়া ৩৬ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩৯ পয়সা করা হয়।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিচালন খরচ, অবকাঠামো নির্মাণ, মেরামত ও সংস্কার এবং আধুনিকায়নসহ বিভিন্ন কাজে খরচ বাড়ে। তাই রেলভাড়া বাড়ানো হতেই পারে। ২০১৬ সালে এডিবি প্রতিবছর ভাড়া বাড়ানোর শর্ত দেয়। কিন্তু আমাদের দেশে প্রতিবছর ভাড়া বাড়ানো হয় না। প্রতিবছর ভাড়া বাড়ানো হলে এবার ভাড়া সাত শতাংশ বাড়ানো হতো বলেই ধারণা। সে ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধিকে ‘বেশি নয়’ বলেই মানবেন সবাই। তবে রেলের সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। ভাড়া বাড়ানো হলেও সেবার মান বাড়ে না, উল্টো লোকসান বাড়ে এ অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
এক্ষেত্রে ভাড়া বাড়ানোর আগে ব্যবস্থাপনা উন্নতকরণ, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা, রেলের বেদখল জমি উদ্ধার এবং লোকসান কমিয়ে রেলের আয় বাড়ানো যেতে পারে। আবার আমদানি কমিয়ে স্থানীয়ভাবে লোকোমোটিভ ও কোচ তৈরি করে ব্যয়ও কমানো যায়।
সড়কপথে দুর্ঘটনা, যানজট ও আরামদায়ক ভ্রমণের জন্য রেলের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে সাধারণ মানুষের। কিন্তু শিডিউল নিয়ে রেল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় যাত্রীদের দুর্ভোগও বাড়ছে। সেবা বাড়াতে পারলে দুর্ভোগই কমবে না, ভাড়া বৃদ্ধিকেও ইতিবাচক হিসেবে নেবে সাধারণ মানুষ। সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার ও অনিয়ম-দুর্নীতিতে শূন্য সহনশীলতায় রেলে স্বচ্ছতা আসবে। তাতে লোকসান কাটিয়ে লাভজনক সংস্থা হয়ে উঠতে পারে রেলওয়ে।
সুত্র:শেয়ার বিজ, মার্চ ১৫, ২০১৯