শিরোনাম

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ সত্ত্বেও তহবিল গঠনের উদ্যোগ নেই

রেলওয়ে কল্যাণ ট্রাস্ট

দুস্থ, অসচ্ছল ও অসুস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কল্যাণে রেলওয়ের ‘কল্যাণ ট্রাস্ট’কে আরও সময়োপযোগী ও আধুনিক রূপ দেয়ার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এজন্য তিনি একটি ‘তহবিল’ গঠনেরও নির্দেশ দিয়েছিলেন। ২০১৪ সালের ২৩ অক্টোবর রেলপথ মন্ত্রণালয় পরির্দশনকালে মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তাদের তিনি এ নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনা উপেক্ষিতই রয়ে গেছে। এ সময়ের মধ্যে তহবিল গঠনের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি ট্রাস্টের ঘরটিতেও।
১৯৮৯ সালে রাজধানীর গুলিস্তান ফুলবাড়িয়া এলাকায় একটি টিনশেড কার্যালয় খোলার মধ্য দিয়ে কল্যাণ ট্রাস্টের যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে এ কার্যালয়টির অবস্থা জরাজীর্ণ। বৃষ্টি এলে পানি ভেতরে ঢুকে। ঝড়-তুফানের সময় নড়বড়ে ঘরটিতে প্রাণ ভয়ে থাকতে হয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। কল্যাণ ট্রাস্টে রেলপথ মন্ত্রণালয় কিংবা বিভাগ এমনকি সরকারের কোনো অর্থ বরাদ্দ নেই। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাসিক চাঁদা আর নামমাত্র কিছু প্রকল্প থেকে আসা অর্থেই চলছে এ ট্রাস্ট। জানতে চাইলে রেলপথ সচিব মো. ফিরোজ সালাহ উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, রেলওয়েতে ব্যাপক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কল্যাণে গঠিত ট্রাস্টের উন্নয়ন হচ্ছে না। যদিও এটির যথাযথ উন্নয়ন ও তহবিল গঠনের দায়িত্ব মূলত রেলপথ বিভাগের। এ বিষয়ে রেলওয়ে মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টরা নিশ্চয় কাজ করছেন। কর্মচারীদের মধ্যে দুস্থ, অসুস্থ এবং দুর্ঘটনায় আহত-নিহত ব্যক্তিদের নিজ উদ্যোগে আর্থিক সাহায্য-সহযোগিতা করে আসছেন রেলপথমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক। একই সঙ্গে মন্ত্রণালয় থেকেও সহযোগিতা করা হচ্ছে। এখন কল্যাণ ট্রাস্টের জন্য একটি বড় অংকের ‘তহবিল’ গঠন জরুরি। রেলওয়ে মহাপরিচালক মো. আমজাদ হোসেন যুগান্তরকে জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রেলপথ মন্ত্রণালয় পরির্দশনকালে রেলওয়ে কল্যাণ ট্রাস্টের জন্য একটি তহবিল গঠনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু আমরা এখনও সেই তহবিল গঠন করতে পারিনি। মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সূত্রে জানা যায়, রেলওয়ে মোট ৪০ হাজার ২৬৪ জন জনবলের স্থলে বর্তমানে ২৭ হাজার ৫৩৫ জন রয়েছেন। এর মধ্যে ১ম শ্রেণীর কর্মকর্তা প্রতি মাসে ১০০, দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তা ৮০, তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী ৬০ ও চর্তুথ শ্রেণীর কর্মচারী ৪০ টাকা চাঁদা প্রদান করেন। অবসর শেষে এসব কর্মকর্তা-কর্মচারী এককালীন মাত্র ১০ হাজার টাকা পেয়ে থাকেন। অথচ চাকরির মেয়াদ পর্যন্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাঁদা প্রদানের পরিমাণ দাঁড়ায় ১০ হাজার টাকারও বেশি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলওয়ের অপারেশন বিভাগের এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, দেশে মাত্র একটি বিভাগ রয়েছে, যে বিভাগে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সর্বদা ঝুঁকির মধ্যে কাজ করেন। দুর্ঘটনায় কোনো কর্মচারী মারা গেলে পরিবারকে মাত্র ১০ হাজার টাকা দেয়া হয়। আর এ টাকা তুলতে গেলে দু’অঞ্চলের দফতরের আসা-যাওয়া করতে করতে খরচ হয়ে যায় ৫/৬ হাজার টাকা। রেলওয়ে কল্যাণ ট্রাস্টটির যদি যথাযথ উন্নয়ন ও তহবিল গঠন করা যেত তাহলে কর্মকর্তা-কর্মচারী তথা তাদের পরিবারের সদস্যরা উপকৃত হতেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ট্রাস্টের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘দুনিয়ায় যদি সবচেয়ে অবহেলিত কোনো ট্রাস্ট থাকে তাহলে তাদেরটি। রেলওয়েতে কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন হলেও এ ট্রাস্টের বেলায় ভয়াবহ বৈষম্য হচ্ছে।’
সূত্র জানা যায়, এ ট্রাস্টে কোনো বরাদ্দ নেই। ৯টি প্রকল্প রয়েছে এ ট্রাস্টের অনুকূলে। এর মধ্যে একটি প্রকল্পের আওতায় দোকান করে লিজ দেয়া হয়েছে। প্রতি বছর লিজ বাবদ প্রায় ৬০/৬৫ লাখ টাকা দেয়া হয় রেলওয়েকে। ইতিমধ্যে রেলওয়ের উন্নয়নের স্বার্থে খিলগাঁও রেলওয়ে মার্কেট উচ্ছেদ করা হয়েছে। অচিরেই উচ্ছেদ করা হবে কারওয়ান বাজার রেলওয়ে মার্কেটও। এ দুটি মার্কেট থেকে প্রতি বছর প্রায় ৪২ লাখ টাকা আসত। অপরদিকে বাকি ৭টি মার্কেটে বকেয়া রয়েছে ১ কোটি ৮৭ লাখ ৭৬ হাজার টাকা।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনসংলগ্ন ৪২ হাজার ৩০০ বর্গফুটের একটি জায়গা ২০০৯ সালে রেলওয়ে থেকে কল্যাণ ট্রাস্টের নামে দেয়া হলেও সে জমিতে আজও দখলে যাওয়া যায়নি। স্থানীয় প্রভাবশালীরা এটি দখল করে রেখেছে।
জানতে চাইলে রেলওয়ে কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নিজাম উদ্দিন মিয়া যুগান্তরকে বলেন, প্রকল্পগুলোই তাদের একমাত্র অর্থের উৎস। এসব প্রকল্প থেকে পাওয়া অর্থ দিয়েই রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কল্যাণে কাজ করা হচ্ছে। তবে ট্রাস্টের নিজস্ব কোনো তহবিল না থাকায় চাহিদা অনুযায়ী সবাইকে সহযোগিতা করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তিনি বলেন, আমি দায়িত্ব নেয়ার পর বকেয়া টাকা তোলার চেষ্টা চালাচ্ছি। সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা পেলে প্রকল্পগুলোতে থাকা বকেয়া টাকা আদায় করা সম্ভব হবে।

সুত্র:দৈনিক যুগান্তর,৮ এপ্রিল ২০১৭


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.