শিরোনাম

দেরিতে শেষ হওয়া প্রকল্পের সুফল পেতেও কালক্ষেপণ!

দেরিতে শেষ হওয়া প্রকল্পের সুফল পেতেও কালক্ষেপণ!

সুজিত সাহা :
ট্রেন চলাচলের গতি বৃদ্ধির স্বার্থে ২০১১ সালে বাংলাদেশ রেলওয়ের লাকসাম-চাঁদপুর রেললাইন রি-মডেলিং প্রকল্প অনুমোদন হয়। প্রকল্পটির কাজ শেষ হয়েছে নির্ধারিত সময়ের প্রায় পাঁচ বছর পর। দেরিতে শেষ হওয়া ট্র্যাকে সর্বোচ্চ গতিবেগে ট্রেন চালানোর অনুমতি দিতেও দেরি করছে রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ। এতে সেবাবঞ্চিত হচ্ছে যাত্রীরা। পরিচালন ব্যয় বাড়ছে রেলওয়ের।

অনুমোদনের পর ২০১১ সালের জুনে লাকসাম-চাঁদপুর রেললাইন রি-মডেলিং প্রকল্পের কাজ শুরুর কথা ছিল। কিন্তু কাজটি শুরু হয় ২০১২ সালের জানুয়ারিতে। ২০১৩ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নানা জটিলতায় তা আটকে ছিল দীর্ঘদিন। তবে নির্ধারিত সময়ের প্রায় পাঁচ বছর পর চলতি বছরের শুরুতে প্রকল্পের কাজ শেষ হলেও সংশ্লিষ্টদের গড়িমসিতে ট্রেনের গতি বাড়ছে না। প্রকল্প শেষের পর জিআইবিআর (গভর্নমেন্ট ইনস্পেক্টর অব বাংলাদেশ রেলওয়ে) ইন্সপেকশন হলেও সর্বোচ্চ গতিবেগে ট্রেন চালানোর অনুমতি দেয়া হয়নি।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি রেলের গুরুত্বপূর্ণ এ রুটটিতে ট্রেন চলাচলের গতি বৃদ্ধির অনুমোদন চেয়ে চিঠি দেয় রেলওয়ের পরিবহন বিভাগ। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ রেলওয়ে/লাকসামের ট্র্যাক প্রকৌশলী রেলপথের কাঠামো অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৭২ কিলোমিটার গতি বৃদ্ধির অনুরোধ জানিয়ে গত ১০ জুন বিভাগীয় প্রকৌশল দপ্তরকে পত্র পাঠান। এরপর গত ২০ জুন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ট্র্যাক সাপ্লাই অফিসার তরুন কান্তি বালা প্রধান প্রকৌশলী (পূর্ব)-এর পক্ষে লাকসাম-চাঁদপুর রেলপথে চলাচলকারী ট্রেনের গতিবেগ বাড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানিয়ে বিভাগীয় প্রকৌশলী-১ মো. রফিকুল ইসলামকে একটি চিঠি পাঠান। এতে উল্লেখ করা হয়, প্রকল্পটির কাজ চলমান থাকায় বিভিন্ন সেকশনে গতি নিয়ন্ত্রণাদেশ আরোপ করা হয়েছিল। প্রকল্পের কাজ শেষ হলেও এখনো গতি বাড়ানো হয়নি বলে চিঠিতে জানানো হয়।

তবে চিঠি দেয়ার এক মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও বিভাগীয় প্রকৌশলীর দপ্তর এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এতে করে রি-মডেলিং হওয়ার পরও রুটটিতে আগের নিয়মে ৫০ ও ৩০ কিলোমিটার গতিবেগে ট্রেন চলাচল করছে। যার ফলে লাকসাম থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত ট্রেন চলাচলে এখনো ২ ঘণ্টার বেশি সময় ব্যয় হয়। গতিবেগ বাড়ানো হলে ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ রুটটি ১ ঘণ্টায় পাড়ি দেয়া যেত।

জানা যায়, রেলের ওয়ার্কিং টাইম টেবিল-৫১ অনুযায়ী রেলপথটির অনুমোদিত গতিবেগ ৫৬ কিলোমিটার হলেও অস্থায়ী গতি নিয়ন্ত্রণাদেশের কারণে চিতোষী রোড-চাঁদপুর সেকশনে ৫০ কিলোমিটার এবং চিতোষী রোড-লাকসাম সেকশনে ৩০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করে। গতি বাড়ানো হলে এ রুটে সর্বোচ্চ ৭২ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলাচল করতে পারবে। এ সুবাদে ট্রেন পারাপারের সময় কমায় বাড়বে রেলওয়ের রাজস্ব আয় ও যাত্রীসেবার মান। কমবে পরিচালন সময় ও ব্যয়।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় প্রকৌশলী (চট্টগ্রাম-১) মো. রফিকুল ইসলাম দেশের বাইরে থাকায় এ বিষয়ে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক সৈয়দ ফারুক আহমেদ বণিক বার্তাকে বলেন, লাকসাম-চাঁদপুর রেললাইন রি-মডেলিং প্রকল্পটি প্রকৌশল বিভাগের অধীন। প্রকল্প পরিচালক বিদেশে থাকায় সঠিক তথ্য আমার কাছে নেই। তবে কাজ শেষ হয়ে যাওয়ায় যেকোনো সময় ট্রেন চলাচলের গতি বাড়ানোর ঘোষণা আসতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।

রেলের নথি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, রি-মডেলিং প্রকল্পে লাকসাম-চাঁদপুর রেলপথটি ৮ টেম্পিং মেশিন দিয়ে প্যাকিং করা হয়েছে। ৭৫ পাউন্ডের রেলপাত ও পিসি স্লিপার দিয়ে এ রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে। পাশাপাশি লাকসাম-নোয়াখালী শাখা লাইনে স্থাপন করা হয়েছে ৭৫ পাউন্ডের রেলপাত ও স্টিল স্লিপার। ফলে শাখা লাইনটিতে বর্তমানে ৬৫ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলাচল করছে। কিন্তু ৭২ কিলোমিটার গতিবেগে ট্রেন চালানোর উপযোগী রেলপথ বসানোর পরও লাকসাম-চাঁদপুর রেললাইনটিতে পাঁচ মাস ধরে নিয়ন্ত্রিত গতিতে ট্রেন চলাচল করায় রেলের পরিচালন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, লাকসাম থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার রেললাইনের পুনঃস্থাপন, স্টেশন ভবন রি-মডেলিং ও মেরামত, ব্রিজ ও কালভার্ট নির্মাণ, টেলিকমিউনিকেশন সিস্টেম ও সিগন্যালিং পদ্ধতি পরিবর্তনে মোট ১৬৮ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। প্রকল্পটি শেষ হতে কয়েক দফা সময় বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে ১০৫ কোটি টাকার ট্র্যাক পুনঃস্থাপনের কাজ বাস্তবায়ন করেছে ভারতীয় কোম্পানি কালিন্দি ইঞ্জিনিয়ারিং। এছাড়া ৮ কোটি টাকায় স্টেশন ভবন রি-মডেলিং ও মেরামতের কাজ পেয়েছে বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠান কাশেম কনস্ট্রাকশন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্যর্থতা ও অর্থ ছাড়ে ধীরগতির কারণে প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়ন হয়নি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, লাকসাম থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত স্টেশন রয়েছে ১১টি। শাহাতলী, চাঁদপুর, হাজীগঞ্জ, মেহের ও চিতশী— এ পাঁচটি বি-ক্লাস স্টেশন ছাড়াও রয়েছে ছয়টি ডি-ক্লাস স্টেশন। রুটটিতে এক জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন (মেঘনা এক্সপ্রেস), এক জোড়া এক্সপ্রেস ট্রেন (জালালাবাদ এক্সপ্রেস), দুই জোড়া কমিউটার ট্রেন (কুমিল্লা-চাঁদপুর) চলাচল করে। যদিও এর আগে নিয়মিত জ্বালানিবাহী ট্রেন, এক জোড়া লোকাল ট্রেন এবং চাঁদপুর থেকে লিংক হয়ে সিলেট পর্যন্ত ট্রেন চলাচল করত।

সুত্র:বণিক বার্তা, জুলাই ২৮, ২০১৮


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.