আবুল বাশার মিরাজ, বাকৃবি :
কয়েক বছর আগেও রেলস্টেশনটি চালু ছিল। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) রেলস্টেশনটির প্ল্যাটফর্ম আজও আছে। রয়েছে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় খচিত সেই নামফলকও। তবে এখন আর সেখানে থামে না কোনো ট্রেন। কয়েক বছরের পরিক্রমায় টিকিট কাউন্টার ও সিগন্যাল ইউনিটটি জরাজীর্ণ অবস্থায় রূপ নিয়েছে। প্রতিদিন ক্যাম্পাসের ভেতর দিয়েই দিব্যি ঢাকা-ময়মনসিংহগামী ১৫টির বেশি ট্রেন চলাচল করে; কিন্তু থামে না একটিও। রেল কেন থামে না তার কারণও অনেকেরই অজানা। যেটি একসময় চালু ছিল, কেন সেটি বন্ধ? প্রশ্নটি সবার!
কালের কণ্ঠ’র অনুসন্ধান ও ময়মনসিংহ রেলস্টেশনের সুপারিনটেনডেন্ট হরি গোপাল সেনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৮৭ সালে তোফাজ্জল হোসেন নামের এক টিটি উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস ট্রেনে কেবিনের ভেতর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাগিবতণ্ডার একপর্যায়ে নিহত হন। এরপর সারা দেশে রেলস্টেশনগুলো ৩৬ ঘণ্টার জন্য বন্ধ থাকে। বন্ধ থাকে বাকৃবির রেলস্টেশনটিও। পরে বাকি সব রেলস্টেশন চালু হলেও আজ পর্যন্ত চালু হয়নি এই স্টেশন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশ থেকে আসা প্রায় ছয় হাজারের বেশি মেধাবী শিক্ষার্থী এখানে অধ্যয়ন করছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা তিন সহস্রাধিক। এদিকে ক্যাম্পাসের পাশেই রয়েছে কয়েকটি গ্রামের প্রায় ২০ হাজারের বেশি বাসিন্দা। রেলস্টেশনটি চালু করা গেলে তাদেরও ভোগান্তি অনেকটা কমে যেত। কারণ ময়মনসিংহ জেলার সঙ্গে আশপাশের জেলার সড়ক ব্যবস্থা বেহালের কারণে রেলপথই হচ্ছে এ অঞ্চলের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র নিরাপদ মাধ্যম। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষক-কর্মচারীসহ সবার পছন্দ রেলপথ।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে রেলস্টেশন, অথচ ট্রেনে ওঠার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রায় ছয় কিলোমিটার যানজটের মধ্য দিয়ে শহরে যেতে হয়। ভোরের ঢাকাগামী ট্রেন ধরতে পারে না তারা। কারণ ভোরবেলা শহরে যাওয়ার জন্য কোনো যানবাহন থাকে না। আবার মধ্যরাতের ট্রেন যখন শহরে থামে তখন ক্যাম্পাসে ফেরার পথে ছিনতাইয়ের কবলে পড়তে হয়, নয়তো যানবাহন না পেয়ে দীর্ঘ পথ হেঁটে আসতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি প্রকৌশল ও কারিগরি অনুষদের জাকি রেজওয়ানসহ বেশ কিছু শিক্ষার্থীর অভিযোগ, ট্রেনে সিট পেতে হলে কমপক্ষে চার থেকে পাঁচ দিন আগে শহরের ময়মনসিংহ স্টেশনে গিয়ে লাইনে দাঁড়াতে হয়। পরে গেলে আর টিকিট পাওয়া যায় না। তখন কালোবাজারিদের কাছ থেকে ডাবল টাকা দিয়ে টিকিট কিনতে হয়।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেমু ট্রেন চালু করতে রেল মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু দীর্ঘদিন পার হলেও বাকৃবিতে সেই ডেমু ট্রেনটিও চালু হয়নি। রেলস্টেশন চালু করতে সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার পরিষদের সভাপতি মো. লুত্ফুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক এ কে এম মাহবুবুর রশীদ স্বাক্ষরিত একটি চিঠি রেজিস্ট্রার বরাবর দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে সব ধরনের ট্রেনে বাকৃবি স্টেশনে যাত্রী ওঠানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করা হয়। কিন্তু কোনো ফল মেলেনি। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি নির্বাচনে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের প্যানেল ও বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের প্যানেল তাদের ইশতেহারে রেলস্টেশনটি চালু করার বিষয়টি উল্লেখ করে। কিন্তু যে দলই নির্বাচিত হোক না কেন, তাতে রেলস্টেশনটি আর সচল হয় না। গত বছর শাখা ছাত্রলীগ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ২১ দফা দাবিতে স্মারকলিপি দিয়েছে। সেখানে স্টেশনটি চালু করার বিষয়টি ছিল অন্যতম একটি দাবি। এ ছাড়া শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, ছাত্র ইউনিয়নেরও প্রধান দাবি স্টেশনটি চালু করা। এত কিছুর পরও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আলী আকবর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রেলস্টেশনটি চালু করা গেলে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মচারীদের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকার মানুষের ভোগান্তি অনেকখানি কমে যেত। রেলস্টেশনটি চালু করার বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।’