মাহবুব হোসেন :
ব্রিটিশ আমল থেকে সিঙ্গেল লাইনেই চলছে উত্তরবঙ্গের রেল। যদিও এত দিনে অবকাঠামোর উন্নয়ন হয়েছে, বেড়েছে ট্রেনের সংখ্যা ও যাত্রী। নাটোরের আবদুলপুর জংশন থেকে উত্তরাঞ্চলের রেলপথে ডাবল লাইন না থাকায় নানা ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের। একসঙ্গে একটির বেশি ট্রেন ছাড়া সম্ভব না হওয়ায় প্রায়ই ঘটছে শিডিউল বিপর্যয়। অতিরিক্ত জ্বালানি খরচও গুনতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে সূত্র জানায়, ব্রিটিশ সরকার পাকশীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ থেকে চিলাহাটি পর্যন্ত ২৫০ কিলোমিটার দুই লেনের রেললাইন স্থাপন করে। ১৮৭৪ থেকে ১৮৭৯ সাল পর্যন্ত ডাবল লাইন থাকলেও পরবর্তীতে তারা সিঙ্গেল লাইন করে। এরপর থেকে সে অবস্থাতেই আছে।
সূত্রটি আরো জানায়, ব্রিটিশরা চলে গেছে, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে কিন্তু তার পরও নাটোরের আবদুলপুর জংশন থেকে চিলাহাটি পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন রয়ে গেছে। বর্তমানে প্রতিদিন অন্তত অর্ধশত ট্রেন উত্তরাঞ্চল থেকে রাজধানী এবং দক্ষিণাঞ্চলে যাতায়াত করছে। মানুষ এখন ট্রেনে যাতায়াত করতে বেশি স্বস্তিবোধ করে। ফলে প্রতিটি ট্রেনেই যাত্রীর চাপ বেড়েছে। কিন্তু একটি লাইনের কারণে প্রতিদিনই যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। সিঙ্গেল লাইনের কারণে এক স্টেশনে ট্রেন থামিয়ে অপর ট্রেনটি ছেড়ে দিতে (পাসিং) হয়। এতে করে অনেক ট্রেন বিলম্বে ছাড়ছে। ফলে যাত্রীরা সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছতে পারছেন না।
এ ব্যাপারে নাটোর রেলওয়ের স্টেশনমাস্টার অশোক কুমার চক্রবর্তী বলেন, ব্রিটিশ সরকার আবদুলপুর জংশন থেকে চিলাহাটি পর্যন্ত এক সময় ডাবল লাইন করেছিল, পরে তারা একটি লাইন তুলে ফেলে। এরপর থেকে সিঙ্গেল লাইনেই চলছে। কিন্তু আগের তুলনায় এখন ট্রেন ও যাত্রীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। ফলে এক লাইন দিয়ে ট্রেন চলাচল করা কঠিন হয়ে পড়েছে। বিপরীত দিকের ট্রেন পাসিং করাতে স্টেশনে একটি ট্রেন থামিয়ে রাখতে হয়। আবার দুর্ঘটনা ঘটলে ট্রেন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রেখে কাজ করতে হয়। এতে একদিকে শিডিউল বিপর্যয় ঘটছে, অন্যদিকে জ্বালানি খরচও বাড়ছে। এ সমস্যা সমাধানে ডাবল লাইনের বিকল্প নেই।
শিডিউল বিপর্যয়ের পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের অর্থনীতির বিষয়টিও উল্লেখ করেন আবদুলপুর জংশনের স্টেশনমাস্টার সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, যমুনা সেতু হওয়ার পর উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতির কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। ট্রেনের ডাবল লাইন হলে অর্থনীতিতে আরো গতি আসবে।
২০১৪ সালে জাতীয় সংসদে আবদুলপুর জংশন থেকে চিলাহাটি পর্যন্ত রেলের ডাবল লাইন নির্মাণের বিষয়টি সংসদে উত্থাপন করেছিলেন নাটোর-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ। সে সময় রেলমন্ত্রী মজিবুল হক ২০১৯ সালের মধ্যে ডাবল লাইন নির্মাণ করে দেয়ার কথাও বলেন। এ ব্যাপারে এমপি আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমার বাড়ির পাশে আবদুলপুর জংশন। ফলে উত্তরাঞ্চলে রেলের ডাবল লাইনের প্রয়োজনীয়তা প্রথমে আমিই অনুধাবন করি। সংসদে বিষয়টি উত্থাপন করলে মন্ত্রী ২০১৯ সালের মধ্যে ডাবল লাইন করে দেয়ার সরকারি পরিকল্পনার কথা জানান। তাছাড়া আবদুলপুর জংশন থেকে চিলাহাটি পর্যন্ত ডাবল লাইন নির্মিত হলে যাত্রী ভোগান্তি নিরসনের পাশাপাশি রেলের রাজস্বও বাড়বে।
সুত্র:বণিক বার্তা