২০১১ সালের ৪ ডিসেম্বরের পূর্ব পর্যন্ত এই লোলুপ দৃষ্টির মানুষের জন্যই সম্ভাবনাময় গণমানুষের এই পরিবহন খাতকে ত্রাণসহায়তা দেওয়ার মতো কোনো রকমে টিকিয়ে রাখা হয়েছিল। দীর্ঘমেয়াদি কোনো প্রকল্প নিয়ে রেলকে নিজ পায়ে দাঁড়ানোর সুযোগ দেওয়া হয়নি কখনো। একের পর এক রেল রুট বন্ধ করে দিয়ে রেলের জায়গা দখল করেই বানানো হয়েছে বাস টার্মিনাল, কোচ কাউন্টার। সেই দৃষ্টি এখন রেলওয়ের ঐতিহাসিক ফুলবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনের জায়গায় উপর।
গত ২৩ এপ্রিল ২০১৭ রোববার ডিটিসিএ পরিচালনা পর্ষদের নবম সভায় ঢাকা সিটি এলাকার বাস টার্মিনাল নির্মাণের জন্য ফুলবাড়িয়ায় রেলওয়ের একটি জমি বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে লিজ দেওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন সড়ক পরিবহন নেতারা। দ্রুত জায়গাটি সিটি করপোরেমনের কাছে বুঝিয়ে দিতে বলা হয়। একটি স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয়ের নিজ সম্পত্তি সম্পর্কে পরিবহন নেতাদের এই ধরনে মন্তব্য দুঃখজনক। উল্লেখ্য দেশ বিভক্ত হবার পর যখন বাংলাদেশের শাসন ভার পাকিস্তান গ্রহণ করে, তখন থেকেই পাকিস্তানের লোভি শাসক গোষ্ঠী বাংলাদেশে উৎপাদিত পণ্য লুটে নেওয়ার চিন্তায় মগ্ন হয়। এই লক্ষ্যকে সফল কারার জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন জরুরি হয়ে পরে । তাই ১৯৬০ এর দশকে ঢাকার একমাত্র রেলষ্টেশনের সম্প্রসারনের উদ্দেশ্যে কমলাপুর রেলস্টেশন স্থাপনা গড়ে তোলে ।
ঢাকা শহরে সিটি বাসের কোনো টার্মিনাল নাই, সে যুক্তিতে নির্ধারিত জায়গা দরকার। তবে সেটা আনন্দবাজার কেন বোধগম্য নয়। কারণ ফুলবাড়িয়া থেকে কয়েকটি বাস ছাড়ে। অথচ মিরপুর বা মতিঝিল থেকে এর কয়েকগুণ বেশি বাস ছাড়ে। তাহলে টার্মিনাল ওই দুই এলাকায় কেন নির্মাণ করা হচ্ছে না, তার কোনো ব্যাখ্যা তাদের কাছে নেই।
সড়ক পরিবহন নেতাদের ভুলে গেলে চলবে না এখন আর রেলওয়ে সড়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত নয়। রেলওয়ে এখন স্বতন্ত্র। তার মন্ত্রী আছে, নিজস্ব বাজেট আছে। আছে মহাপরিকল্পনা। কাজেই সে তার জায়গা কিভাবে ব্যবহার করবে, কাকে দিবে, কি কাজে লাগাবে সে সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ তার। চাহিবা মাত্রই দিতে বাধিত থাকিবে ব্যাপারটা তেমন আর নেই। ভুলে গেলে চলবে না রেলের সম্পত্তির উপর কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের লোলুপ দৃষ্টি প্রতিহত করার ক্ষমতা রেলওয়ের আছে।
লেখকঃ আতিকুর রহমান, রেল গবেষক।