রাজস্ব বাড়াতে রেলওয়ের মাধ্যমে পণ্য পরিবহনে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট আরোপের কথা ভাবছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। পেট্রোলিয়ামজাতীয় পণ্যের ক্ষেত্রে ৪ দশমিক ৫ ও অন্যান্য পণ্যে ১০ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করেছে সংস্থাটি। ভ্যাট আরোপে রেলের ভাড়া সমন্বয়সংক্রান্ত সম্ভাব্যতা যাছাইয়ে রেলওয়েকে একটি চিঠিও পাঠিয়েছে এনবিআর।
চিঠিতে এনবিআর জানিয়েছে, বাংলাদেশ রেলওয়ের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ট্রেন সার্ভিস, ইজারাদার, নির্মাণ সংস্থা, জোগানদার, বিজ্ঞাপনী সংস্থার সেবার বিপরীতে ভ্যাট এনবিআরের কোষাগারে জমা হয়। তবে ট্রেনে পণ্য পরিবহনে কোনো ভ্যাট প্রদান করা হয় না। ট্রেনে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত হারে ভাড়া আদায় করা হলেও তা মূসকসহ নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে ওই চিঠিতে। বিষয়টি নিয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ রেলওয়ে ও রেলওয়ে ভবনের সমন্বিত সিদ্ধান্তও জানতে চেয়েছে এনবিআর।
এনবিআরের মূসক নীতিসংক্রান্ত একজন কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে বলেন, সাধারণ যাত্রীদের ভাড়া ভ্যাটমুক্ত হলেও মূসক আইনে পণ্য পরিবহনের ওপর ভ্যাট দেয়ার নিয়ম আছে। রেলওয়ের পণ্য পরিবহনে এখন পর্যন্ত এ ভ্যাট আদায় করা হয় না। রেলে বুকিংয়ের মাধ্যমে পণ্য পরিবহন, পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য পরিবহন ও কনটেইনারে পণ্য পরিবহন ভ্যাটযোগ্য বলে মনে করছে এনবিআর। তবে রেলে ভাড়ার হার সরকার কর্তৃক নির্ধারিত হওয়ায় এখানে সাধারণ আইন প্রয়োগ করা যায় না। ফলে এর আইনি দিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে রেলওয়েকে চিঠি দেয়া হয়েছে। রেলের ভাড়ার বিপরীতে ভ্যাট পরিশোধ করলে তা কীভাবে সমন্বয় হবে, সে বিষয়েও সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছে রেলওয়েকে।
এনবিআর বলছে, ১৯৯১ সালের ভ্যাট আইন অনুযায়ী কোনো ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার্স প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পণ্য বুকিংয়ের মাধ্যমে গন্তব্যস্থলে প্রেরণ সেবার ওপর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট ধার্য আছে। পরিবহন ঠিকাদার কর্তৃক সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি সংস্থা, ব্যাংক, বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, লিমিটেড কোম্পানি বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাধারণ পরিবহন সেবার ওপর ১০ শতাংশ ও পেট্রোলিয়ামজাতীয় পণ্য পরিবহনের ওপর ৪ দশমিক ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হয়। এছাড়া বাণিজ্যিক কাজে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা, ব্যাংক, বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, লিমিটেড কোম্পানি বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার, মাইক্রোবাস, কোস্টার, মিনিবাস, ট্রেন, লঞ্চ, স্পিডবোট, ট্রলার বা অনুরূপ যেকোনো নামের যেকোনো ধরনের যানবাহন ভাড়া প্রদান করলে তার ওপর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট প্রযোজ্য। রেলওয়ে সরকারি হলেও তাদের কাজ বাণিজ্যিক ভিত্তিতে হওয়ায় স্বাভাবিকভাবে তাতে ভ্যাট প্রযোজ্য।
বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান হিসাব কর্মকর্তা কামরুন নাহার বলেন, এ বিষয়ে এনবিআরের কোনো চিঠি এখনো রেলওয়ে পায়নি। চিঠি পেলে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তবে বাংলাদেশ রেলওয়ে চট্টগ্রাম কার্যালয়ের ঠিকানায় চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন এনবিআরের কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া।
সুত্র:বণিক বার্তা,অক্টোবর ০১, ২০১৭