ঈদের ছুটি শেষে কর্মস্থলে ছুটছে মানুষ। এ কর্মজীবী মানুষের ভিড়ে ময়মনসিংহ এখন তীব্র যানজটের নগরীতে পরিণত হয়েছে। যানজট লেগে আছে মহাসড়কেও। বাস-ট্রেনে সিট না পেয়ে ছাদে চেপে যাচ্ছে মানুষ। এ সুযোগে বাসে দ্বিগুণ ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেছেন অনেকে।
বৃহত্তর ময়মনসিংহের ছয় জেলার ২০ রুটের গাড়িগুলোকে অবশ্যই ময়মনসিংহ নগরী হয়ে যেতে হয়। ফলে ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে চলাচলকারী যাত্রীদের চাপে ময়মনসিংহে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
শুক্রবার ও গতকাল ময়মনসিংহ নগরীর পাটগুদাম আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল ও মাসকান্দা আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, মানুষের উপচে পড়া ভিড়। ময়মনসিংহ রেলস্টেশনেও একই অবস্থা। কোনো বাসেই সিট খালি নেই। তাই দাঁড়িয়ে কিংবা বাসের ছাদে করে যেতে দেখা গেছে অনেককে।
এদিকে প্রতিটি ঢাকামুখী বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে যাত্রীরা। ১০০ টাকার ভাড়া ২০০ থেকে আড়াইশ টাকা, ২০০ টাকার ভাড়া ৪০০ টাকা নেয়া হচ্ছে। বেশি ভাড়া নেয়ার কথা স্বীকারও করেছেন কয়েকজন সুপারভাইজার। কম ভাড়ায় কেউ কেউ দাঁড়িয়ে কিংবা ছাদে উঠে যাচ্ছে।
গামেন্টকর্মী আনোয়ারা পারভীন বলেন, আসার সময় দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে এসেছি। এখন দ্বিগুণেরও বেশি ভাড়া চাইছে। তার ওপর সিট খালি নেই। সিএনজি অটোরিকশাগুলোয়ও ২০০ টাকার ভাড়া ৩০০ টাকা নেয়া হচ্ছে।
যাত্রীরা জানায়, বেশির ভাগ যাত্রীই ঢাকা ও গাজীপুর জেলার বিভিন্ন পোশাক কারখানায় কাজ করে। বেশি ভাড়া দিতে গিয়ে তাদের পকেট ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে।
বেশি ভাড়া নেয়ার কারণ জানতে চাইলে কয়েকজন বাসচালক বলেন, ঈদেই একটু বেশি আয় হয়। তাছাড়া ঢাকা যাচ্ছি যাত্রীবোঝাই করে আর আসছি অর্ধেক খালি হয়ে। এটিও পুষিয়ে নিতে হয়।
এদিকে অতিরিক্ত গাড়ির চাপে নগরীতে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল ময়মনসিংহ শহরের পাটগুদাম আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল এলাকায় সেতুর ওপর থেকে পাটগুদাম মোড় পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ঢাকাগামী বাস, ট্রাক, সিএনজি অটোরিকশা, পিকআপ ভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহনের তীব্র যানজট লেগে ছিল। পাঁচ কিলোমিটার পথ পার হতে সময় লাগছে ১ ঘণ্টার বেশি। গত বুধবার থেকে নগরীতে যানজটের কারণে ময়মনসিংহের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সড়কে চলাচল করা বাসের যাত্রীরা দীর্ঘ পথ হেঁটে অতিক্রম করে বাসে উঠছে।
ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল ইসলাম বলেন, ঢাকাগামী গাড়ির চাপ বেশি থাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। আমরা নিয়ন্ত্রণে রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা করছি।
গত শুক্রবার ময়মনসিংহ রেলস্টেশনে দেখা গেছে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। ট্রেনের ভেতর ও ছাদে কোথাও খালি ছিল না। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাত্রীরা ছাদে গাদাগাদি করে উঠেছে।
ঢাকাগামী তিস্তা এক্সপ্রেসের যাত্রী মনির হোসেন বলেন, বাসে ভাড়া বেশি, যানজট আর ভিড়ের কারণে ট্রেনে যাচ্ছি। ট্রেনে ভিড় হলেও যানজট নেই, ভাড়াও বেশি নিচ্ছে না। যথাসময়ে যাওয়া যাচ্ছে। তাছাড়া ট্রেনের যাতায়াত আরামদায়ক এবং দুর্ঘটনার ঝুঁকি কম।
সুত্র:বণিক বার্তা, জুন ২৪, ২০১৮