ইসমাইল আলী:
গত এপ্রিল থেকে ঢাকা-কলকাতা রুটে চলাচল করছে পুরো শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ট্রেন। এতে মৈত্রী এক্সপ্রেসের কেবিনে প্রতি আসনের ভাড়া ২০ ডলার। আর চেয়ারের ভাড়া ১২ ডলার। উভয় ক্ষেত্রেই রয়েছে ১৫ শতাংশ ভ্যাট। সব শ্রেণির টিকিটের সঙ্গে ৫০০ টাকার ট্র্যাভেল ট্যাক্স যোগ হবে। তবে এ ভাড়া বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বরে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এদিকে ঢাকা-কলকাতা রুটে চলাচলকারী মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের বাংলাদেশ অংশের ইমিগ্রেশন ও চেকিং করা হয় দর্শনাতে। আগামী মাস থেকে এটি ঢাকাতেই করা হবে। এজন্য প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে পাঁচ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। এছাড়া প্রস্তুতি সম্পন্ন না করায় আগামী ৩ আগস্ট থেকে দ্বিতীয় মৈত্রী ট্রেন চালু অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
রেলওয়ের তথ্যমতে, মৈত্রী ট্রেনের ভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে এরই মধ্যে প্রাথমিক আলোচনা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে কেবিনে প্রতি আসনের ভাড়া ২৫ ও চেয়ারের ভাড়া ১৫ ডলার হতে পারে। উভয় ক্ষেত্রেই ১৫ শতাংশ ভ্যাট বহাল থাকবে। পাশাপাশি সব শ্রেণির টিকিটের সঙ্গে ৫০০ টাকার ট্র্যাভেল ট্যাক্সও থাকবে। দিল্লিতে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এ প্রস্তাব করা হবে।
এদিকে গত বছর দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর যৌথ ঘোষণায় জানানো হয়, সীমান্তে মৈত্রী এক্সপ্রেসে ইমিগ্রেশন ও চেকিং করা হবে না। ঢাকা ও কলকাতাতেই এটি সম্পন্ন করা হবে। ফলে বিরতিহীনভাবে ঢাকা থেকে কলকাতা পর্যন্ত ট্রেনটি চলাচল করবে। এজন্য প্রস্তুতির অংশ হিসেবে গত ১১ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমানের সভাপতিত্বে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ঢাকায় ইমিগ্রেশন ও চেকিং সম্পন্ন করতে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকা ও কলকাতায় ইমিগ্রেশন ও চেকিং সম্পন্ন হলে মৈত্রী এক্সপ্রেসের যাত্রীদের সীমান্তে আর চেকিং করা হবে না। ইঞ্জিন পরিবর্তনের জন্য ট্রেনটি শুধু ১০ মিনিটের বিরতি দেবে। এতে মৈত্রী এক্সপ্রেসের যাত্রা সময় অনেক কমবে।
উল্লেখ্য, ১৯৬৫ সালে ভারত-বাংলাদেশ ছয়টি সীমান্ত দিয়ে রেল যোগাযোগ চালু ছিল। তখন খুলনা-কলকাতার পাশাপাশি দার্জিলিং মেইল যেত পার্বতীপুর-শিলিগুড়ি। কিন্তু ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর সব ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এখন আবার সেই লাইনগুলো চালুর ওপর জোর দিয়েছে দুই দেশ।
রেলের ইতিহাস অনুযায়ী, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২-৭৩ সালে একবার আগের ট্রেন লাইন চালু হয়। ওই সময় ভারতে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীরা দেশে ফেরেন ট্রেনে চড়ে। পরবর্তী সময়ে আর কোনো যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করেনি। ২০০১ সাল থেকে খুলনা-কলকাতা লাইনে মালগাড়ি চলাচল করছে সীমিতভাবে।
পরে ২০০৮ সালে দুই দেশের মধ্যে মৈত্রী এক্সপ্রেস চালু হয়। প্রথমে সপ্তাহে এক দিন যেত ও এক দিন আসত ট্রেনটি। শুরুর দিকে যাত্রী না পেলেও পরে ধীরে ধীরে মৈত্রী এক্সপ্রেস জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এতে সপ্তাহে দুদিন যেত ও আসত ট্রেনটি। এখন সপ্তাহে তিন দিন করে যাওয়া-আসা করে মৈত্রী এক্সপ্রেস।
এদিকে ২০১৪ সালের এপ্রিলে ঢাকায় আন্তঃদেশীয় রেলওয়ে সভায় খুলনা-কলকাতা একজোড়া মৈত্রী এক্সপ্রেস চালুর প্রস্তাব করা হয়েছিল। তখন ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বনগাঁও-কলকাতা স্টেশনে সাব-আরবান ট্রেনের আধিক্য ও সেকশনাল ক্যাপাসিটি না থাকার কারণে খুলনা-কলকাতা লাইনে ট্রেন চালুতে সময় নেয়। কারিগরি সক্ষমতা অর্জনের পর গত এপ্রিলে এর উদ্বোধন করেন দুই প্রধানমন্ত্রী। এটি বনগাঁও লাইন দিয়ে সীমান্ত স্টেশন পেট্রাপোল-বেনাপোল দিয়ে চলাচল করবে।
সূত্র জানায়, খুলনা-কলকাতা রুটে প্রস্তাবিত দ্বিতীয় মৈত্রী এক্সপ্রেসের ভাড়া এখনও চূড়ান্ত হয়নি। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ রেলওয়ে এসি কেবিনে ১২ ডলার ও এসি চেয়ারে আট ডলার ভাড়ার প্রস্তাব করেছে। উভয় ক্ষেত্রেই রয়েছে ১৫ শতাংশ ভ্যাট। সব শ্রেণির টিকিটের সঙ্গে ৫০০ টাকার ট্র্যাভেল ট্যাক্স যোগ হবে। তবে ভারত ট্রেনটির ভাড়ার প্রস্তাব অনুমোদন করেনি। এতে ট্রেন চালুর প্রক্রিয়া আটকে আছে। এছাড়া ভারতের অংশে এখনও অবকাঠামোগত কিছু প্রক্রিয়া বাকি রয়েছে। ফলে ৩ আগস্ট দ্বিতীয় মৈত্রী ট্রেন চালু অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আমজাদ হোসেন শেয়ার বিজকে বলেন, মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রা সময় হ্রাস ও প্রক্রিয়া সহজ করতে এখন থেকে ঢাকা এবং কলকাতায় হবে ইমিগ্রেশন ও চেকিং। এজন্য কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। পাশাপাশি ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে প্রাথমিক চিন্তাভাবনা চলছে। উভয় পক্ষ সম্মত হলেই এটি কার্যকর হবে। আর দ্বিতীয় মৈত্রী চালুর বিষয়ে কিছু আনুষ্ঠানিকতা এখনও বাকি আছে। সেগুলো সম্পন্ন করে শিগগিরই এটি চালু করা যাবে বলে আশা করা যায়।
সুত্র: শেয়ার বিজ