ইসমাইল আলী:
রাজধানীর যানজট কমাতে উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে মতিঝিল পর্যন্ত নির্মাণ করা হবে প্রায় ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেল। জাপানের অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তবে ২০১৬ সালের জুলাইয়ে হলি আর্টিজান হামলার পর ঢাকা ত্যাগ করে দেশটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। নিরাপত্তার আশ্বাসে বাংলাদেশে ফিরে কাজে যোগ দেয় কয়েক মাস পর। তবে প্রকল্পে নিয়োজিত দেশটির নাগরিকদের নিরাপত্তা এখনও ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছে জাপান।
এজন্য বাড়তি নিরাপত্তা নিশ্চিতে অতিরিক্ত প্রায় ৭৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে বলেছে জাপান সরকার। মেট্রোরেলের মূল্যায়ন সম্পর্কিত দুই দেশের সাম্প্রতিক বৈঠকে এ দাবি জানানো হয়। এক্ষেত্রে প্রতিটি প্যাকেজের জন্য পৃথক নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হবে। যদিও নিরাপত্তা পরিস্থিতি উন্নতির ফলে প্রস্তাবটি শিথিল করার প্রস্তাব চেয়েছে বাংলাদেশ।
তথ্যমতে, মেট্রোরেল নির্মাণে ব্যয় হবে ২২ হাজার কোটি টাকা; এর মধ্যে ১৬ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা দেবে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)। বাকি পাঁচ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা জোগাবে সরকার। তবে নিরাপত্তা বাবদ কোনো অর্থ বরাদ্দ ছিল না। এজন্য অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাবদ ব্যয় উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনায় (ডিপিপি) অন্তর্ভুক্তের প্রস্তাব করেছে জাপান।
এতে বলা হয়, জাইকা ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় সন্ত্রাসী হামলার পর নিরাপত্তা নিয়ে গভীরভাবে উদ্বীগ্ন। এক্ষেত্রে প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নের স্বার্থে বাংলাদেশ সরকার জাপানি কোম্পানির কর্মীদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে। তবে এক্ষেত্রে প্রকল্পের আওতাধীন নির্মাণ সাইটে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
এক্ষেত্রে সিকিউরিটি গার্ড ও সিকিউরিটি অফিসার নিয়োগ, পুলিশ ও আনসার সদস্য নিয়োগ, আনসার ব্যারাক নির্মাণ, প্রকল্প এলাকায় অস্থায়ী সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ, কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ, মেটাল ডিটেক্টর দরজা কেনা, সিসি ক্যামেরা, সিকিউরিটি কন্ট্রোল রুম স্থাপন, ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ, পিটিজেড ও বুলেট ক্যামেরা স্থাপন, আর্চওয়ে মেটাল ডিটেক্টর ও অ্যালার্ম সিস্টেম স্থাপন, নিরাপত্তাসামগ্রী (যথা: ওয়াকি-টকি, হ্যান্ড মেটাল ডিটেক্টর, বাইনোকুলার, আন্ডার ভেহিক্যাল সার্চ মিরর) কেনা, পুলিশ পেট্রোল কার কেনা অন্যতম। এগুলো নকশা প্রণয়ন ছাড়াও প্রকল্পের মেয়াদকালীন সময়ে এসব নিরাপত্তাসামগ্রী রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থাও করবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
প্রস্তাবনায় দেখা যায়, সাত প্যাকেজে পৃথক পৃথকভাবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা করতে হবে। এর মধ্যে দ্বিতীয় প্যাকেজে ব্যয় হবে ১৭ কোটি ৬০ লাখ ইয়েন, তৃতীয় ও চতুর্থ প্যাকেজে ২৯ কোটি ৭৯ লাখ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ প্যাকেজে ২৯ কোটি ৭৯ লাখ, সপ্তম প্যাকেজে ১৪ কোটি চার লাখ এবং অষ্টম প্যাকেজে ১১ কোটি ৪৩ লাখ ইয়েন ব্যয় হবে। তবে প্রথম প্যাকেজে নিরাপত্তা বাবদ তেমন কোনো অর্থ ব্যয় হবে না। সব মিলিয়ে নিরাপত্তায় ১০২ কোটি ৬৫ লাখ ইয়েন বা প্রায় ৭৫ কোটি টাকা ব্যয় হবে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ গণপরিবহন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সাবেক সড়ক বিভাগের সচিব এমএএন ছিদ্দিক শেয়ার বিজকে বলেন, জাপানের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। বর্তমানে নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে গেছে। তাই বিষয়টি নিয়ে পুনর্বিবেচনার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। দেশটির সরকারের পরামর্শক্রমে জাইকা তাদের মতামত জানাবে। এর ভিত্তিতে চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সুত্র:শেয়ার বিজ,অক্টোবর ৩০, ২০১৭