শিরোনাম

জনবল সংকট উদ্বেগ বাড়াচ্ছে রেলওয়ের

জনবল সংকট উদ্বেগ বাড়াচ্ছে রেলওয়ের

শামীম রাহমান :
মঙ্গলবার বেলা ১২টা। মাইক্রোবাস নিয়ে কুমিল্লা সদরের শ্রীনিবাস এলাকার একটি অরক্ষিত রেল ক্রসিং পার হচ্ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য আবু তাহের (৫২)। ক্রসিংয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা পাহাড়িকা এক্সপ্রেসের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন তাহের। কিছুক্ষণ পর মারা যান মাইক্রোবাসের আরো দুই আরোহী।

শুধু কুমিল্লা সদরের ওই রেল ক্রসিং নয়। সারা দেশে এ রকম অনেক রেল ক্রসিং রয়েছে, যেগুলো সম্পূর্ণ অরক্ষিত। এসব অরক্ষিত ক্রসিংয়ে পার হতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে মানুষ। এজন্য রেলের জনবল সংকটকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।
রেলওয়ের ট্রাফিক বিভাগের তথ্য বলছে, রেল নেটওয়ার্কে অনুমোদিত ক্রসিংয়ের সংখ্যা ৭৮০। এর মধ্যে গেটকিপার রয়েছে মাত্র ২৪২টিতে। অর্থাত্ দুই-তৃতীয়াংশের বেশি ক্রসিংয়ে কোনো গেটকিপার নেই।

শুধু গেটকিপার পদে যে কর্মী সংকট চলছে তা নয়। জনবল সংকটের কারণে রেলের পরিচালন, রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামত, দাপ্তরিক কার্যক্রম— সবকিছুই ব্যাহত হচ্ছে। জনবলের অভাবে সচল করা যাচ্ছে না অর্ধশতাধিক স্টেশন। একই কারণে কার্যক্ষমতা হারাচ্ছে রেলের তিনটি ওয়ার্কশপও। যাত্রীসেবাও হচ্ছে ব্যাহত। বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মকর্তারাও। তবে বিভিন্ন মামলার কারণে জনবল নিয়োগ কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তারা।
জনবল সংকটের বিষয়টিকে ‘অত্যন্ত উদ্বেগজনক’ অভিহিত করেছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক আমজাদ হোসেন। বিষয়টি সম্পর্কে তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘জনবল কমে আসার বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। উদ্বেগজনক এ কারণে যে, জনবল ছাড়া বাংলাদেশ রেলওয়ের মতো শ্রমঘন প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা সম্ভব না। বিশেষ করে অত্যাবশ্যকীয় কর্মচারী যদি না থাকে, তাহলে দৈনন্দিন কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।’
তিনি বলেন, ‘রেলওয়ে ওয়ার্কশপে শ্রমিকস্বল্পতা ৬০ শতাংশ পেরিয়ে গেছে। ব্যাপকভাবে শ্রমিক সংকটের কারণে কারখানার উৎপাদনশীলতা ব্যাহত হচ্ছে। জনবল সংকটের কারণে রেলওয়ের সেবার মান সেভাবে আমরা বাড়াতে পারছি না। যদিও সেবার মান বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। যাত্রীরাও আমাদের কাছ থেকে এটাই প্রত্যাশা করে।’
জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন জটিলতা রয়েছে বলে জানান রেলওয়ে মহাপরিচালক। তিনি বলেন, ‘জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা হচ্ছে বিভিন্ন মামলা-মোকদ্দমা। এসবের বাইরে কিছু অভ্যন্তরীণ সমস্যাও আছে। আমরা এরই মধ্যে বেশকিছু মামলা নিষ্পত্তি করেছি। বিভিন্ন পদে নতুন করে নিয়োগ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। রেলওয়ের জনবল সংকট কাটাতে ক্রমাগত শূন্য পদে নিয়োগ দিতে হবে এবং শূন্য পদ পূরণের ক্ষেত্রে সচরাচর যেসব জটিলতা দেখা দেয়, সেগুলো দূর করতে হবে। অর্থাত্ পদ শূন্য হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যেন সে পদে নিয়োগ দেয়া সম্ভব হয়, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা মন্ত্রণালয়কে গ্রহণ করতে হবে।’
রেলওয়ের সাংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী, সংস্থাটির অনুমোদিত পদসংখ্যা ৪০ হাজার ২৪০ জন। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, কর্মরত জনবলের সংখ্যা ২৬ হাজার ৪৩। শূন্যপদ ১৪ হাজার ২২১টি। এর মধ্যে তৃতীয় শ্রেণীর ৮ হাজার ৩১২, চতুর্থ শ্রেণীর ৫ হাজার ১৬৯, দ্বিতীয় শ্রেণীর ৬০৬, প্রথম শ্রেণীর ১৩২ ও সচিব বা তদূর্ধ্ব শ্রেণীর দুটি পদ শূন্য রয়েছে।

রেলওয়ের কর্মচারীদের অবসর ও নিয়োগের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছর প্রতিষ্ঠানটির ১ হাজার ৪৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী অবসর গ্রহণ করেন। এর বিপরীতে নিয়োগ পান ৫৭৮ জন। এর মধ্যে কর্মচারীর সংখ্যা ৫৪৪।

সর্বশেষ দুই অর্থবছরে রেলওয়ের জনবল কমেছে ২ হাজার ২৮০ জন। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে শূন্যপদ ছিল ১১ হাজার ৯৪১টি। পরের অর্থবছরে তা ১৩ হাজার ১৭৮-এ উন্নীত হয়। আর সর্বশেষ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটিতে শূন্য হয়েছে আরো ১ হাজার ৪৩টি পদ।
এ বিষয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, জনবল সংকটের কারণে রেলওয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। দ্রুত প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগের লক্ষ্যে আমরা বিভিন্ন নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান রেখেছি।

সুত্র:বণিক বার্তা,অক্টোবর ২১, ২০১৭


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.