।। নিউজ ডেস্ক ।।
আজ থেকে (১ ফেব্রুয়ারি) থেকে শুরু হতে যাচ্ছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। সাধারণ মানুষের কাছে বইমেলা নামে পরিচিত এই বর্ণাঢ্য মেলাকে ঘিরে আজ হবে বাংলা একাডেমির আনুষ্ঠানিক সম্মেলন। রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে বসা অর্ধ শতাব্দীর ইতিহাস বিজড়িত এই মেলাকে ঘিরে শহরবাসীর রয়েছে অফুরন্ত আবেগ ও ভালোবাসা। আর তারই পূর্ণ প্রস্তুতির জন্য মাঘ মাসের শীতকে উপেক্ষা করে দিন-রাত স্টল বানানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন প্রকাশকরা। একনাগাড়ে চলছে প্রচ্ছদ তৈরি, মুদ্রণ ও বাঁধাইয়ের কাজ। আর এর সবকিছুর পেছনে কাজ করছে প্রকাশকদের একটা বাড়তি আত্মবিশ্বাস- এবার রাজধানীর বুকে পুরোদমে যাত্রা শুরু করা মেট্রোরেল বয়ে আনবে প্রচুর দর্শক। তাদের ভেতরে থাকবেন উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ক্রেতা-যারা মেলার বেচাকেনাকে সার্থক করে তুলবেন।
এ বছর মেলার সব আয়োজন এককভাবে সম্পন্ন করছে বাংলা একাডেমি। স্টল বিন্যাস, প্রবেশপথ, খাবারের ব্যবস্থাসহ মেলা প্রাণবন্ত করতে একাডেমির পক্ষ থেকেও থাকছে নানা আয়োজন। এবার মেলায় অংশ নেবে মোট ৬৪৭টি প্রতিষ্ঠান। তালিকাভুক্ত ৬২৪টির সঙ্গে নতুন যুক্ত হচ্ছে ২৩টি প্রকাশনী। মেট্রোরেল চালু থাকায় মেলায় পাঠকদের অংশগ্রহণ নিয়ে উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে মেলার আয়োজক ও প্রকাশকদের মধ্যে। বিগত বছরগুলোর শঙ্কা কাটিয়ে এবারের মেলা আরও জমজমাট হবে আশা করছে বাংলা একাডেমি।
আদর্শ প্রকাশনীর সিইও মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘গত বছর আমাদের মেলায় স্টল দেওয়া হয়নি। এবারও নানা ধোঁয়াশার পর অনুমতি পেয়েছি। স্টল পাব কি না তা নিয়ে অনেক চিন্তায় ছিলাম। সব গোছাতে পারিনি এখনো। খুব ব্যস্ত সময় যাচ্ছে। আমাদের ৫০টি নতুন বই আসছে এবার। মেলায় এবার পাঠকদের আনাগোনাও বেশি দেখা যাবে মনে করছি। মেট্রোরেল বাড়তি একটা সুবিধা দেবে।’
করোনা মহামারিতে বিগত বছরগুলোতে বইমেলা নিয়ে নানা সংকটে পড়তে হয় আয়োজক ও প্রকাশকদের। করোনা মহামারি চলাকালে ২০২১ সালে মেলায় বই বিক্রি হয় মাত্র ৩ কোটি ১১ লাখ টাকার। ২০২২ সালে করোনার কারণে কিছুটা দেরিতে শুরু হয় বইমেলা। ১৫ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া ওই মেলায় প্রায় ৫২ কোটি ৫০ লাখ টাকার বই বিক্রি হয়। ২০২৩ সালে যথাসময়ে মেলা চললেও কাগজের মূল্যবৃদ্ধিতে বইয়ের চড়ামূল্য নিয়ে ছিল সমালোচনা। তারপরও বিক্রি হয় ৪৭ কোটি টাকার বই। পাশাপাশি আদর্শ প্রকাশনীকে স্টল বরাদ্দ না দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা-সমালোচনা তৈরি হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন পরিসরে। এ বছর আদর্শ প্রকাশনীকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
বিগত বছরগুলোতে বিভিন্ন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে মেলার কাঠামোসহ অন্য সব কাজ সম্পন্ন হতো। বিভিন্ন অসহযোগিতা ও সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এবার পুরো মেলার দায়িত্ব বাংলা একাডেমি একাই সম্পন্ন করবে। এমনটাই জানিয়েছে বইমেলা কমিটি।
মেলাকে কেন্দ্র করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমি অংশে এরই মধ্যে প্রায় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে আয়োজক কমিটি। প্রথমবারের মতো শিক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত ৫ শতাংশ ছাড়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কার্ড দেখাতে পারলেই মিলবে এ সুযোগ। এ ছাড়া ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের বইমেলায় নিয়ে আসতে শিক্ষকদের কাছে চিঠি দিয়েছে বাংলা একডেমি।
তবে স্টল বরাদ্দ দেরিতে হওয়ায় মেলা শুরুর আগে সম্পূর্ণ স্টল নির্মাণ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রকাশকরা। প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান পুঁথিনিলয়ের প্রকাশক এবং পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহ-সভাপতি শ্যামল পাল বলেন, ‘আমরা বাংলা একাডেমিকে চলতি মাসের ১৫ তারিখ স্টল বরাদ্দের কথা বলেছিলাম। বারবার আবেদন জানিয়েছিলাম স্টল সাজানোর জন্য অন্তত ১৫ দিন সময় দিতে; কিন্তু তারা শোনেনি। বাংলা একাডেমি কলকাতা বইমেলা নিয়ে ব্যস্ত ছিল। ২৩ তারিখ স্টল বরাদ্দ দেওয়ার পর সাতদিনে কাজ শেষ করা সম্ভব হয় না। এতে মেলার সৌন্দর্য নষ্ট হবে।’
তিনি বলেন, ‘এবার মেট্রোরেল আমাদের অনেক সুবিধা দেবে। পাঠকরা মেলামুখী হবে। এবার স্টল বরাদ্দ নিয়ে কোনো প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ঝামেলায় পড়েনি। প্রকাশকরা আগে থেকে সচেতন ছিল।’
লিপইয়ারের কারণে এ বছর মেলা হবে ২৯ দিন। বাংলা একাডেমি সূত্রে জানা যায়, প্যাভিলিয়ন ও স্টলের জন্য রাখা হয়েছে আলাদা সারি। প্রবেশদ্বার থাকবে চারটি। টিএসসির উল্টোদিকের প্রবেশদ্বার, বাংলা একাডেমির উল্টোদিক ও রমনা কালীমন্দিরের নিকটবর্তী প্রবেশপথ। গত বছর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের (আইইবি) দিকের প্রবেশপথটি সপ্তাহে পাঁচদিন বন্ধ থাকত। এবার তা পূর্ণ সময় খোলা থাকবে। রমনা কালীমন্দিরের নিকটবর্তী মেলার অংশটুকু হবে শিশুচত্বর। প্রতিবারের মতো এ বছরও বইমেলায় খাবারের দোকান থাকছে। মেলায় খাবারের দোকান থাকবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শেষ প্রান্তে। চুলা বন্ধ রাখা সাপেক্ষে তাদের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
মেট্রোরেলের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ম্যানেজার মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আগের নিয়মেই আমাদের ট্রেন চলাচল করবে। মেলা উপলক্ষে শিডিউল এখনো পরিবর্তন হয়নি। শুক্রবার মেট্রোরেল চালুর ব্যাপারে আবেদন করেছিল, তবে এ ব্যাপার এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।