সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ২০১৯ সালের মধ্যেই পদ্মা সেতুতে ট্রেন ও সড়কযান চলার কথা। তবে সেতুর অগ্রগতি ৪৬ দশমিক ৫০ শতাংশ হলেও রেলসংযোগ প্রকল্পের খবরই নেই। শুরু তো দূরের কথা, ঋণচুক্তিই হয়নি এখনো। কেবল আশ্বাস দিয়েই সময়ক্ষেপণ করছে চীন। আবার বিকল্প মাধ্যমেও প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নেওয়া যাচ্ছে না। এমন বাস্তবতায় উভয় সংকটে রেল কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, পদ্মা রেলসেতু নির্মাণে পাঁচ বছরে চীনের এক্সিম ব্যাংকের ৩১৩ কোটি ৮৭ লাখ ডলার ঋণ দেওয়ার কথা। আর ২০১৭ সালেই এ প্রকল্পে ৮০ কোটি ডলার প্রয়োজন। তাই দ্রুত ঋণচুক্তি সম্পন্ন করতে চায় সরকার; কিন্তু এখন পর্যন্ত কথা রাখেনি চীন। এর আগে প্রকল্পের অর্থায়নে ৮৫ এবং ১৫ ভাগ নিয়ে একটি জটিলতা ছিল। পরিস্থিতির বাস্তবতায় ১৫ শতাংশ জিওবি খাত তথা নিজস্ব অর্থায়ন থেকে বরাদ্দেও সম্মত হয় বাংলাদেশ সরকার। এর পর থেকেই ‘অতিদ্রুত’ ঋণচুক্তি এবং অর্থায়নের জন্য চীনের সঙ্গে চিঠি আদান-প্রদান এবং বৈঠক চালিয়ে যাচ্ছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি); কিন্তু দফায়-দফায় বৈঠক হলেও কার্যত সুখবর নেই। সম্প্রতি ব্যাংকটিকে রাজি করাতে ইআরডির নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলও চীন ঘুরে এসেছে। ঋণের ব্যপারে কেবল আশ্বাসের বুলি শুনিয়েছে ব্যাংক। ঋণচুক্তির ব্যাপারে আজও দিনক্ষণ মেলেনি।
এদিকে বিকল্প হিসেবে নিজস্ব অর্থায়ন বা অন্য কোনো দাতাসংস্থার সহায়তায়ও প্রকল্পের কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। কারণ নতুনভাবে শুরু করতে চাইলে দরপত্র আহ্বান, মূল্যায়ন ও চূড়ান্তকরণে পার করতে হবে ন্যূনতম এক বছর। এ ছাড়া নতুন করে ডিজাইন প্রণয়নের প্রসঙ্গটিও সামনে চলে আসবে। তাই ওই পথেও হাঁটতে পারছে না রেল কর্তৃপক্ষ।
এক সময় এ প্রকল্পে ঋণ দিতে প্রস্তাব ছিল দাতাসংস্থা এডিবির (এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক)। তা না করে জিটুজি পদ্ধতিতে (বিনা দরপত্রে) প্রায় ৩৪ হাজার কোটি টাকায় চীনের অর্থায়নে প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেডের (সিআরইসি) সঙ্গে বাংলাদেশ রেলওয়ে চুক্তিবদ্ধ হয়। এখন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের চুক্তি বাতিল করাও সহজ কাজ নয়। তাই বাধ্য হয়েই চীনের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে। আবার নানা কাঠখড় পুড়িয়ে ঋণচুক্তি হলেই নির্মাণকাজ শুরু করা যাবে না। কারণ সেখানেও ‘লোন ইফেকটিভ’ নামে রয়েছে আরেকটি কঠিন ধাপ। এই ঋণচুক্তি কার্যকর কতটা বন্ধুর পথ, তা হাতে-কলমে দেখানো হচ্ছে কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পে। এটিও চীনের অর্থায়নে দরপত্রহীন জিটুজি প্রকল্প।
গত বছরের ১৪ অক্টোবর চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের বাংলাদেশ সফরে কর্ণফুলী টানেল নির্মাণে ঋণচুক্তি হয়। একই দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শি জিন পিং নির্মাণকাজও উদ্বোধন করেন; কিন্তু ঋণচুক্তির এক বছর হতে চললেও অর্থ দিচ্ছে না চীন। এখনো ঋণ সংগ্রহের বিষয়টি যাচাই-বাছাই করছে দেশটির এক্সিম ব্যাংক। আর এতে থমকে আছে বহুল প্রতীক্ষিত এ টানেলের নির্মাণকাজ। এ নিয়ে গতকালও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে বৈঠক হয়েছে। এক্সিম ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে এসেছে ডিজভার্সমেন্টের নামে নতুন চক্কর। ফার্স্ট ডিজভার্সমেন্টের জন্য আবারও কাগজপত্র চাওয়া হয়েছে ব্যাংকের পক্ষ থেকে। একই বৈঠকে পদ্মা রেলসংযোগ প্রকল্প প্রসঙ্গে এক্সিম ব্যাংকের প্রতিনিধিরা জানান, এটি অগ্রাধিকার তালিকায় আছে। এ বছরের মধ্যেই ঋণচুক্তি হবে।
এদিকে রেলসূত্র জানিয়েছে, পদ্মা রেলসংযোগ প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু করতে ২০ শতাংশ মোবিলাইজেশন মানি দিতে হবে ঠিকাদারকে (সিআরইসি)। অথচ অর্থের অভাবে ঝুলে আছে নির্মাণকাজ। তাই দ্রুত ঋণচুক্তির ব্যপারে চীনের এক্সিম ব্যাংককে রাজি করাতে একটি প্রতিনিধি দল গত মাসে চীন ঘুরে এসেছে। এ সফরের সার্থকতা ও ঋণচুক্তির অগ্রগতি প্রসঙ্গে রেলসচিব মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, আশা করি দ্রুত ঋণচুক্তি হবে। সে অনুযায়ী কার্যক্রম চলছে।
সফর শেষে রেলওয়ের মহাপরিচালক আমজাদ হোসেন জানিয়েছেন, এক্সিম ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে তাদের চাওয়া কাগজপত্র সরাসরি উপস্থাপন করা হয়। প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নের গুরুত্বও তুলে ধরা হয় সেখানে। তারা ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। আশা করি এক মাসের মধ্যেই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
সুত্র:আমাদের সময়,১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭