সৌমিত্র শীল চন্দন:
রাজবাড়ী জেলায় তিনটি রেলপথে ৮৮টি রেল ক্রসিংয়ের মধ্যে বেশিরভাগ গেটে ব্যারিয়ার ও গেটম্যান নেই, যে কারণে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হয় যানবাহন ও পথচারীরা। মাঝেমধ্যে ঘটে দুর্ঘটনাও। রেলের হিসাবমতে ৬৪টি রেল ক্রসিংয়ে কোনো ব্যারিয়ার ও গেটম্যান নেই।
রাজবাড়ী রেলওয়ে সূত্র জানায়, রাজবাড়ীতে মোট রেলপথ ৯০ কিলোমিটার। এর মধ্যে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দঘাট থেকে মাছপাড়া পর্যন্ত ৫৩, পাঁচুরিয়া থেকে বসন্তপুর পর্যন্ত ১২ এবং কালুখালী থেকে নলিয়া গ্রাম পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার রেলপথ রয়েছে। এসব রেলপথে তিন ধরনের ক্রসিং রয়েছে। কিছু ক্রসিংয়ে ব্যারিয়ার ও গেটম্যান রয়েছেন, কোনো কোনোটায় ব্যারিয়ার নেই; কিন্তু গেটম্যান রয়েছেন এবং কিছু ক্রসিংয়ে ব্যারিয়ার বা গেটম্যান কোনোটাই নেই। যেসব গেটে ব্যারিয়ার ও গেটম্যান কোনোটাই নেই সেখানে পথচারীরা নিজ দায়িত্বে রাস্তা পারাপার হন।
গোয়ালন্দঘাট থেকে মাছপাড়া রেলপথে বৈধ রেলগেট রয়েছে ১৪টি। এখানে ১১টি ক্রসিংয়ে গেটম্যান রয়েছেন এবং অন্য তিনটিতে কোনো গেটম্যান নেই। পাঁচুরিয়া-বসন্তপুর রেলপথে ছয়টি বৈধ রেলক্রসিং থাকলেও একটিতেও কোনো গেটম্যান নেই। অন্যদিকে কালুখালী-ভাটিয়াপাড়া রেলপথের রাজবাড়ীর অংশে বৈধ রেলক্রসিং রয়েছে ১৮টি। এর মধ্যে শুধু চারটিতে ব্যারিয়ার ও গেটম্যান রয়েছেন। এখানে ১৪টিতে ব্যারিয়ার ও গেটম্যান নেই। এ ছাড়া এসব রেলপথে রাজবাড়ীর অংশে অন্তত ৫০টি অবৈধ রেলক্রসিং রয়েছে, যেখানে কোনো গেটম্যান বা ব্যারিয়ার নেই। এসব স্থানে নিজ দায়িত্বে রাস্তা পারাপার হতে হয়।
রাজবাড়ীতে রেল জংশন রয়েছে দুটি। একটি পাঁচুরিয়ায় এবং অন্যটি কালুখালীতে। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দঘাট থেকে রাজশাহী ও খুলনা পর্যন্ত যাতায়াত করা যায়। পাঁচুরিয়া রেল জংশন সদর উপজেলায় অবস্থিত। পাঁচুরিয়া থেকে সরাসরি ফরিদপুর যাতায়াত করা যায়। অন্যদিকে কালুখালী থেকে ফরিদপুর হয়ে গোপালগঞ্জ জেলার ভাটিয়াপাড়া পর্যন্ত সরাসরি রেলপথ রয়েছে। প্রতিদিন এসব রেলপথে শত শত যাত্রী যাতায়াত করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাজবাড়ী শহরের প্রাণকেন্দ্রে ১নং রেলগেট অবস্থিত। এখান দিয়ে প্রতিদিন শত শত যানবাহন ও পথচারী পারাপার হয়ে থাকেন। এটিতে গেটম্যান ও ব্যারিয়ার দুটোই আছে। তবে এ গেটের ৫০ গজ দূরে অবস্থিত ২নং রেলগেট। এটি দিয়েও প্রতিদিন শত শত যানবাহন ও পথচারী পার হয়ে থাকেন। অথচ এ গেটে ব্যারিয়ার নেই। গেটম্যান নিয়োগ হয়েছেন নয় মাস ধরে। ১৯৯৪-৯৫ সালের দিকে যাতায়াত সুবিধার জন্য রাতারাতি এ গেটটি গড়ে উঠেছিল। এ গেটে দায়িত্ব পালনকারী নজরুল ইসলাম জানান, এখানে দু’জন গেটম্যান পর্যায়ক্রমে দায়িত্ব পালন করে থাকেন। প্রকল্পভিত্তিক নিয়োগে তারা চাকরি করছেন। ট্রেন যাতায়াতের সময় নিশান উঁচিয়ে দু’পাশের যানবাহন থামাতে হয়। অনেক সময় নিশান উপেক্ষা করেই যানবাহনগুলো পার হয়ে যায়।
স্থানীয়রা জানান, এ গেটের পাশেই রয়েছে একটি বিদ্যালয় ও ব্যস্ত সড়ক। অন্য পাশে তিন রাস্তার সমাহার। শহরের ব্যস্ততম এলাকায় এখান দিয়ে অনেক যানবাহন ও সাধারণ মানুষ যাতায়াত করেন। ব্যারিয়ার না থাকায় তাড়াহুড়া করতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। কিছুদিন আগে ট্রেনের ধাক্কায় একজন গুরুতর আহত হন।
রাজবাড়ী রেলস্টেশনের অনতিদূরে ভবানীপুর ড্রাই আইস এলাকায়ও একইভাবে গড়ে উঠেছে রেলক্রসিং। এর এক কিলোমিটারের মধ্যে চারটি রেলক্রসিংয়ের একই অবস্থা- কোনো ব্যারিয়ার বা গেটম্যান নেই। ড্রাই আইস ফ্যাক্টরি এলাকার গেটটি বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। গেট পার হওয়ার সময় ট্রেন আসছে কি-না তা দেখার উপায় নেই। বেশ কয়েক বছর আগে এ গেট দিয়ে মোটরসাইকেলে পার হতে গিয়ে দুর্ঘটনায় নিহত হন বিএনপি নেতা শাহ আলম ফরিদের ছেলে কানন। সম্প্রতি কালুখালী-ভাটিয়াপাড়া রেলপথের বালিয়াকান্দি উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের শোলাকুড়া রেলক্রসিংয়ে ঘটনাস্থলেই তিনজন নিহত হন। এ ছাড়া আরও কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে গেটম্যান বা ব্যারিয়ার না থাকায়।
রাজবাড়ী রেলওয়ের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল হানিফ জানান, রেলওয়ের রাজবাড়ী অংশের মাছপাড়া থেকে গোয়ালন্দ ঘাট পর্যন্ত প্রায় সব রেলগেটে গেটম্যান রয়েছেন। নতুন করে গেটম্যান নিয়োগ করা হলে যেসব জায়গায় গেটম্যান নেই সেখানে পদায়ন করা হবে।
সুত্র:সমকাল, ০৫ জানুয়ারি ২০১৯