সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ী এলাকায় রেলপথের ওপর দিয়ে গেছে একটি কাঁচা রাস্তা। প্রায় সারা দিনই মানুষ চলাচল করে এ রাস্তা দিয়ে। ছোট ছোট যানবাহনও চলে। হঠাৎ হুইসেল দিয়ে ট্রেন এল। লেভেল ক্রসিংয়ের দুই পাশে দাঁড়িয়ে গেল মানুষ ও যানবাহন। কিন্তু সেখানে কোনো গেটম্যানের দেখা মিলল না।
রেলওয়ের হিসাবে, সিলেট বিভাগের ২৩৯টি লেভেল ক্রসিংয়ের মধ্যে অধিকাংশই এমন বিপজ্জনক। কর্তৃপক্ষের দাবি, ১৬৭টি লেভেন ক্রসিংয়েরই অনুমোদন নেই। এগুলোর বিরুদ্ধে অতীতে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানানো হয়েছে।
রেলওয়ের নিয়ম অনুযায়ী, রেললাইনের ওপর দিয়ে রাস্তা তৈরি করতে হলে রেল কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে লেভেল ক্রসিংয়ের উভয় পাশে গেট নির্মাণসহ রেল কর্তৃপক্ষের কাছে ১০ বছরের জন্য কমপক্ষে তিনজন গেটরক্ষীর মজুরি মজুদ রাখতে হয়। কিন্তু সিলেট বিভাগে এ নিয়ম মানা হচ্ছে না। অনুমোদনহীন লেভেল ক্রসিং বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়ায় গ্রামীণ সড়ক বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অরক্ষিত ক্রসিংয়ের সংখ্যাও বাড়ছে। এতে বাড়ছে দুর্ঘটনাও।
সিলেট বিভাগের সংশ্লিষ্ট রেলওয়ে পুলিশ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর সিলেট বিভাগে এ পর্যন্ত ট্রেনে কাটা পড়ে প্রাণহানি ঘটেছে ৪৪ জনের। এর মধ্যে রেলওয়ে থানা সিলেটের আওতায় ১৮টি, রেলওয়ে কুলাউড়া থানার আওতায় ৬টি, রেলওয়ে শ্রীমঙ্গল থানার আওতায় ২০টি প্রাণহানি ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনার বেশির ভাগই ঘটেছে অরক্ষিত ক্রসিংয়ের কারণে।
রেলওয়ে সিলেট বিভাগের রেলপথ প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সিলেট বিভাগে মোট লেভেল ক্রসিং ২৩৯টি। এর মধ্যে বৈধ মাত্র ৭২টি। তবে রেলওয়ে বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী-২ (ঢাকা) আহসান জাবির জানান, ‘সিলেট বিভাগে মোট রেলগেট ৯৬টি। এর মধ্যে মাত্র ২০টি গেট অনুমোদনহীন।
শহরতলির কয়েকটি অনুমোদনহীন লেভেল ক্রসিং ঘুরে দেখা গেছে, ‘সাবধান সামনে রেল পারাপার’, ‘সামনে রেলপথ, ধীরে চলুন’, ‘সামনে রেল ক্রসিং’ ইত্যাদি লেখা সাইনবোর্ড টানানো থাকলেও একটিতেও নেই সিগনালম্যান।
রেলওয়ে সিলেট বিভাগের রেলপথ প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, অবৈধ ১৬৭টি রেল ক্রসিংয়ের মধ্যে সিলেট জেলায় ৫৩টি, মৌলভীবাজারে ৪২টি, হবিগঞ্জে ৫৯টি ও সুনামগঞ্জ জেলায় ১৩টি। স্থানীয় বাসিন্দারা চলাচলের জন্য এগুলো গড়ে তুলেছেন।
রেলওয়ে বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী-২ (ঢাকা) আহসান জাবির বলেন, কোন জেলায় কতটি অবৈধ লেভেল ক্রসিং বা অনুমোদনহীন রেলগেট আছে, তার সঠিক তথ্য দিতে পারব না। তবে এসব অনুমোদনহীন লেভেল ক্রসিংয়ের মধ্যে যেগুলো গুরুত্বপূর্ণ বলে আমাদের কাছে মনে হচ্ছে, সেসব ক্রসিং অনুমোদন দিয়ে সিগনালম্যান দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
তিনি দাবি করেন, অনেক গেট আমরা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। কিন্তু স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপে স্থানীয় বাসিন্দারা পুনরায় তৈরি করেছে। এসব গেটের ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসনকে এজাহার দেয়া হয়েছে। এখন এটির প্রয়োগ করা পুলিশের কাজ।
তবে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে রেলওয়ের এজাহারের দায়েরের বিষয়টি অস্বীকার করা হচ্ছে। সিলেটের রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, রেলওয়ে শ্রীমঙ্গল থানার ওসি মো. আবুবকর সিদ্দিক, রেলওয়ে কুলাউড়া থানার ওসি মো. রাসেল মাহমুদ বলেন, অনুমোদনহীন লেভেল ক্রসিংয়ের ব্যাপারে তারা কোনো এজাহার পাননি। তবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এজাহার দিলে তারা অবশ্যই ব্যবস্থা নেবেন। একই কথা বলেছেন রেলওয়ে আখাউড়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার পারভেজ আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, আমাদের কাছে এ রকম কোনো অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ এলে সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ নিই। তাছাড়া এটি মূলত রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাজ।
সুত্র:বণিক বার্তা,