নিজস্ব প্রতিবেদক: যাত্রী চাহিদা মেটাতে ২০১১ সালে ৭০টি মিটারগেজ ইঞ্জিন কেনার উদ্যোগ নিয়েছিল রেলওয়ে। কয়েক দফা দরপত্র বাতিলের পর গত বছর ইঞ্জিনগুলো কেনায় চুক্তি সই হয়। কেরিয়ার হুন্দাই রোটেম থেকে ইঞ্জিনগুলো কেনায় ব্যয় হচ্ছে। বাস্তবায়ন বিলম্বে প্রকল্পটির ব্যয় বাড়ছে প্রায় ৩৭ শতাংশ। পাশাপাশি ইঞ্জিনগুলো কেনায় নেওয়া হচ্ছে কঠিন শর্তের ঋণ।
যদিও ২০১৫ সালে সারা দেশে মিটারগেজ রেলপথ পর্যায়ক্রমে বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। এর পরিপ্রেক্ষিতে নতুন কোনো মিটারগেজ রেলপথ নির্মাণ করছে না রেলওয়ে। নতুন সব রেলপথই হবে ব্রডগেজ বা ডুয়েলগেজ। এছাড়া বিদ্যমান মিটারগেজ রেলপথগুলোও পর্যায়ক্রমে ডুয়েলগেজে রূপান্তর করা হচ্ছে। তাই প্রকল্পটির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।
তথ্যমতে, ২০১১ সালে ৭০টি মিটারগেজ ইঞ্জিন কেনায় ব্যয় ধরা হয়েছিল এক হাজার ৯৪৫ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৩০টি সম্পূর্ণ অবস্থায়, ২৫টি অর্ধেক খোলা ও ১৫টি সম্পূর্ণ খোলা অবস্থায় আনা হবে। এক্ষেত্রে অর্ধেক ও সম্পূর্ণ খোলা ইঞ্জিনগুলো দেশের এনে ওয়ার্কশপে সংযোজন করা হবে।
নতুন হিসেবে ইঞ্জিনগুলো কেনায় ব্যয় হচ্ছে দুই হাজার ৬৫৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ ব্যয় বেড়ে গেছে ৭১৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকা বা ৩৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ। প্রকল্পটির ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব গত নভেম্বরে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়। শিগগিরই তা চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে।
সূত্র জানায়, ৭০টি মিটারগেজ ইঞ্জিন কেনায় তিন দফা দরপত্র আহ্বান করা হয়। তবে উপযুক্ত প্রস্তাব না পাওয়ার প্রথম দুইবার দরপত্র বাতিল করা হয়। তৃতীয় দফায় সরবরাহকারীর ঋণে (সাপ্লায়ার্স ক্রেডিট) ইঞ্জিনগুলো কেনায় অর্থায়নের ব্যবস্থাও করছে হুন্দাই রোটেম। এ জন্য উচ্চসুদে ঋণও নিতে হচ্ছে। গত বছর সেপ্টেম্বরে এ সংক্রান্ত চুক্তি সই করে রেলওয়ে।
৭০টি ইঞ্জিনের মধ্যে আংশিক ও সম্পূর্ণ খোলা ইঞ্জিনগুলো দেশে এনে পাবর্তীপুরের কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানায় সংযোজন করা হবে। এ জন্য দাম কিছুটা কম পড়বে বলে ধরা হয়েছিল। যদিও রেলওয়ে এর আগে আংশিক বা সম্পূর্ণ খোলা ইঞ্জিন ক্রয় করেনি। এ কারণে ডিপিপিতে অনুমান-নির্ভর মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে পূর্ণাঙ্গ ও খোলা ইঞ্জিনের দাম প্রায় কাছাকাছি প্রস্তাব করেছে হুন্দাই রোটেম।
ডিপিপির তথ্যমতে, পূর্ণাঙ্গ ইঞ্জিনের এককপ্রতি দাম ধরা হয়েছিল ২২ কোটি টাকা, আংশিক খোলা ১৫ কোটি ৬০ লাখ ও সম্পূর্ণ খোলা ইঞ্জিনের দাম ১৪ কোটি টাকা ধরা হয়। তবে হুন্দাই রোটেম এসব ইঞ্জিনের একক প্রতি দাম প্রস্তাব করে যথাক্রমে ৩৩ লাখ ৯৫ হাজার ডলার (২৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা), ৩২ লাখ ডলার (২৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা) ও ৩১ লাখ ৮৪ হাজার ডলার (২৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা)।
এ হিসাবে, ৩০টি পূর্ণাঙ্গ ইঞ্জিনে ব্যয় বাড়ছে ১৯২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা, ২৫টি আংশিক খোলা ইঞ্জিনে ব্যয় বাড়ছে ১৭৯ কোটি ৭২ লাখ টাকা ও ১৫টি সম্পূর্ণ খোলা ইঞ্জিনে ব্যয় বাড়ছে ১৮৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এছাড়া ইঞ্জিনগুলোর জন্য খুচরা যন্ত্রাংশ কেনায় ব্যয় বাড়ছে ৪৬ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।
জানতে চাইলে রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে শেয়ার বিজকে বলেন, বাজার দরের চেয়ে অনেক কমে ইঞ্জিনগুলো কেনা হচ্ছে। আর সুদের হার দেখার বিষয় অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি)। তাদের সুপারিশ ও ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই প্রস্তাবটি চূড়ান্ত করা হয়েছে।
সুত্র:শেয়ার বিজ, জানুয়ারি ১১, ২০১৯