চলন্ত রেল, ইঞ্জিন, পাওয়ার কার ও লোকোশেড থেকে রেলে সাধারণত তেল চুরির ঘটনা ঘটে। আর তেল চুরির ঘটনায় দেশের অর্ধশতাধিকের বেশি স্পটে শতাধিক সিন্ডিকেট এ কাজের সঙ্গে জড়িত। এই অসাধু চক্রকে ঠেকাতে থেমে নেই রেলপথ কর্তৃপক্ষও। বিভিন্ন সতর্কতামূলক পদক্ষেপ ও নতুন নতুন পন্থা এবং প্রতিরোধে নানা কৌশল অবলম্বন করছেন তারা, কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। রেলে সারা বছরে চুরি হয় প্রায় দেড় কোটি লিটারের বেশি তেল, যার বাজারমূল্য প্রায় শতকোটি টাকা (এক লিটার ৬৫ টাকা হিসাবে)।
রেলের এই তেল চুরি রোধ করবে কে? এই তেল চুরিতে কারা জড়িতরেল কর্তৃপক্ষ না বাইরের মানুষ?
গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জেনেছি, ‘সারা দেশে প্রতিদিন ৩৫০টি ট্রেন চলাচল করে। এসব ট্রেনে প্রতিদিন গড়ে প্রায় পৌনে দুই লাখ লিটার ডিজেল খরচ হয়। এ হিসাবে বছরে ব্যয় হয় ছয় কোটি ৩৮ লাখ ৭৫ হাজার লিটার। কোনো কোনো বছর এর চেয়ে কম-বেশি ডিজেল ব্যবহার করা হয়। এই তেল থেকে বছরে চুরি হয়ে থাকে প্রায় দেড় কোটি লিটার, যার বাজারমূল্য ৯৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা (এক লিটার ৬৫ টাকা হিসাবে)। গড়ে প্রতিদিন চুরির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪০ হাজার লিটার। চলন্ত রেলের চুরি ঠেকানোর ব্যাপারে সর্বশেষ রেল কর্তৃপক্ষ সব রেলইঞ্জিন ক্যালিব্রেশন বা ক্যালিব্রেটেড করার প্রক্রিয়াটি অনুসরণ করছে। অর্থাৎ এই ইঞ্জিনটি এক কিলোমিটার কিংবা ১০ কিলোমিটার চলতে কতটুকু তেল লাগবে তা স্থির করেছে এবং প্রত্যেকটি তেল ট্যাঙ্কারের সঙ্গে স্কেল লাগিয়েছে। তবে এটা বলা যায়, কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর সমন্বয়ে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার তেল চুরি হয়ে যাচ্ছে। চুরির সঙ্গে জড়িতদের পাশাপাশি যারা চোরাই তেল বিক্রি করবে তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। রেল পুলিশের বিরুদ্ধেও রয়েছে দুর্নীতির অভিযোগ।
তেল চুরির অপরাধে বিভিন্ন সময়ে চোরচক্র হাতেনাতে ধরা পড়েছে। আবার চুরির অপরাধে সাময়িক শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের, কিন্তু কঠোর শাস্তি হয়নি। এত কিছুর পরও চুরি পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। গত বছর নাটোরের লালপুরে অভিযান চালিয়ে রেলের তেল চোরচক্রের প্রধান হাফিজুলসহ পাঁচজনকে আটক করে র্যাব। এ চক্রের কাছ থেকে এক হাজার ৩৮০ লিটার তেল উদ্ধার করা হয়।
এসব সুপারিশের মধ্যে রয়েছে তেল চুরি রোধকল্পে ফুয়েল ট্যাঙ্কে তালাচাবির মাধ্যমে লকিংয়ের ব্যবস্থা করা, লোকোশেডে প্রতিটি লোকোমোটিভের ফুয়েল ট্যাঙ্কে তেল ভরার পরে ফুয়েল ট্যাঙ্কের ক্যাপ লাগিয়ে তালাচাবি লাগিয়ে তা সংরক্ষণের জন্য লোকোমাস্টারের কাছে জমা রাখা এবং লোকোমাস্টার নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছানোর পরে চাবিটি সংশ্লিষ্ট লোকোশেডে বা পরবর্তী লোকোমাস্টারের কাছে হস্তান্তর করা। তাহলে জবাবদিহি করানো যাবে। এছাড়া তেল চুরির বিষয়ে রেল মন্ত্রণালয়ের কঠোর হওয়া দরকার। সরকারের কোটি টাকা রক্ষা করার দায়িত্ব এই মন্ত্রণালয়েরই। তেল চুরি রোধ করতে না পারলে রেল কর্তৃপক্ষই জড়িত বলে মনে হচ্ছে। না হলে এমন কাজ কখনও করা সম্ভব হবে না। রেলে তেল চুরি কি সরষেতে ভূত?
শতাব্দী জুবায়ের
শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
সুত্র:শেয়ার বিজ, জুন ৩০, ২০১৮