ইসমাইল আলী: যাত্রী পরিবহন সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ২০০টি মিটার গেজ ও ৬০টি ব্রড গেজ কোচ মেরামত করে রেলওয়ে। এর বড় অংশই বেসরকারি খাতে মেরামত করা হয়। তবে এসব কোচের অবস্থা খুবই খারাপ। প্রকল্প শেষ হওয়ার এক বছর না যেতেই ভেঙে গেছে কোচের মেঝে, ছিঁড়ে গেছে সিট। ফলে মেরামতের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন রেলপথ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
সূত্র জানায়, বেশ কয়েক বছর নতুন কোচ না কেনায় রেলের যাত্রী পরিবহন চাহিদা সক্ষমতা কমতে থাকে। এর মধ্যে বেশ কিছু কোচ বিকল হয়ে পড়ে থাকে। এজন্য যাত্রী পরিবহন বাড়াতে ২০০৯ সালে ২৬০টি কোচ মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে রেলওয়ের নিজস্ব ওয়ার্কশপের সক্ষমতা না থাকায় কিছু অংশ বেসরকারি খাতে এসব কোচ মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বাকিগুলো মেরামত করা হয় রেলওয়ের নিজস্ব তত্তাবধানে। সে সময় কোচগুলো মেরামতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১২২ কোটি ২৬ লাখ টাকা। তবে বাস্তবে এ খাতে ব্যয় হয় ১০৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।
ব্যয় কম হলেও এগুলোর মেরামতের মান ছিল খুবই খারাপ, যা আইএমইডির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এতে বলা হয়, ২০১৪ সালের জুনে প্রকল্পটি সমাপ্ত হয়। আর ২০১৫ সালের ৩০ এপ্রিল ও ১১ মে কোচগুলো পরিদর্শন করে আইএমইডি। ৩০ এপ্রিল রাজশাহী স্টেশনে অপেক্ষমাণ কোচ নং-৫১৪১ (তেঁতুলিয়া এক্সপ্রেস), কোচ নং- ৫৪২০ (সুন্দরবন এক্সপ্রেস), কোচ নং- ৫৫২২ (সাগরদাঁড়ি এক্সপ্রেস) এবং কোচ নং-৪১১০ সরেজমিন পরিদর্শন করা হয়। এর মধ্যে ৫৫২২ ও ৪১১০ সৈয়দপুর ওয়ার্কশপে রেলওয়ের নিজস্ব তত্তাবধানে মেরামত করা হয়েছে। আর ৫১৪১ ও ৫৪২০ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে মেরামত করানো হয়।
কোচগুলো ২০১১ সালে মেরামত করা হয়েছে বলে জানান রেলওয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী। পরিদর্শনকালে ৫৪২০ কোচের মেঝে ভাঙা অবস্থায় দেখা যায়। প্রকল্প শেষ হওয়ার বছর না ঘুরতেই নষ্ট হয়ে যাওয়া কাম্য নয় বলে মন্তব্য করে আইএমইডি পরিদর্শনদল। তখন নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, রেলওয়ের গার্ডদের ট্র্যাংক ওই কোচে রাখা হয়। মেঝেতে সেগুলো অসাবধানতাবশত ফেরার কারণে এ অবস্থা হয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
এদিকে ১১ মে চট্টগ্রামে স্টেশন ইয়ার্ডে পাঁচটি মিটার গেজ যাত্রীবাহী কোচ সরেজমিন পরিদর্শন করে আইএমইডি প্রতিনিধিদল। এগুলো হলো ৬০২৪, ৩৪৩৮, ২২৫, ২০৭ ও ২৩৪। এর মধ্যে একটি কোচের মেঝে ও সিট নোংরা অবস্থায় পাওয়া যায়। একটি কোচের সিট ছেঁড়া অবস্থায় ছিল। কোচগুলো দ্রুতই মেরামতের জন্য ওয়ার্কশপে পাঠানো বলে জানান রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী। এছাড়া উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) অনুযায়ী কোচগুলোতে অগ্নিনিরোধক যন্ত্র রাখার কথা থাকলেও তা মানা হয়নি।
পরিদর্শনকালে বেসরকারি সংস্থার নিজস্ব কোনো ওয়ার্কশপ আছে কি না জানতে চায় আইএমইডি দল। তখন জানানো হয়, বেসরকারি সংস্থার নিজস্ব কোনো ওয়ার্কশপ নেই। তবে যন্ত্রপাতি ও জনবল নিয়োগ দিয়ে রেলওয়ের বিদ্যমান লাইনের ওপর রেখে কোচগুলো মেরামত করা হয়। গুণগত মান বজায় রেখে কীভাবে উম্মুক্ত স্থানে এসব কোচ মেরামত সম্ভব জানতে চাওয়া হলেও তার কোনো উত্তর দিতে পারেনি রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা।
পরিদর্শন প্রতিবেদনে বেশ কিছু সমস্যা তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে ঘন ঘন প্রকল্প পরিচালক পরিবর্তন। প্রকল্পটিতে পাঁচ বছরে সাতজন পরিচালক ছিলেন। এতে কাজের মান নিয়ে সমস্যা তৈরি হতে পারে বলে মন্তব্য করা হয়। এছাড়া নি¤œমানের মেরামতের জন্য আগামীতে রাজস্ব খাতে রেলের কোচ মেরামতের সুপারিশ করা হয়।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আমজাদ হোসেন শেয়ার বিজকে বলেন, রেলওয়ের প্রচুর কোচ বিকল হয়ে পড়েছে। নিজস্ব ব্যবস্থাপনা এত কোচ মেরামত করা সম্ভব নয়। তাই যাত্রী চাহিদা মেরামতে বেসরকারি ব্যবস্থাপনা মেরামত করা হয়েছিল। তবে ভবিষ্যতে এ ধরনের মেরামতের ক্ষেত্রে গুণগত মান নিশ্চিতে জোর দেওয়া হবে।
সুত্র:শেয়ার বিজ,অক্টোবর ১৩, ২০১৭