নিউজ ডেস্ক:
কমলাপুরে বিভিন্ন আন্তনগর ট্রেনের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত টিকিট বিক্রির শুরুর পরপরই কাউন্টার থেকে ‘নেই’, ‘নেই’ বলে অপেক্ষমাণদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কেবিন ও চেয়ার কোচের টিকিট তদবিরে আগেই অলিখিতভাবে বুকিং হয়ে যাচ্ছে। ফলে সাধারণ টিকিট ক্রেতারা নিয়ম অনুসারে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছে।
গতকাল সোমবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল পর্যন্ত ৩১টি আন্তনগর ট্রেনের ১৩ জুনের ট্রেনের টিকিট বিক্রি হয়। সেই সঙ্গে বিশেষ ট্রেনের টিকিটও প্রথমবারের মতো বিক্রি হয়েছে। আগের চেয়ে প্রায় চার হাজার টিকিট বেশি বরাদ্দ ছিল গতকাল। তার পরও রব ছিল টিকিট নেই, টিকিট নেই। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কামরার টিকিট শুরুতেই ‘শেষ হয়ে গেছে’ বলে আওয়াজ দেওয়া হয় কাউন্টারের ভেতর থেকে।
গতকাল সোমবার আগাম টিকিট বিক্রির চতুর্থ দিন পুরো একটা দিন অপেক্ষা করেও শহীদুল হক চট্টগ্রাম যাওয়ার কোনো টিকিট পাননি। দুপুরে কমলাপুরে আলাপকালে ক্ষুব্ধ শহীদুল বলেন, ‘এই স্টেশনে ২৪ ঘণ্টাই ছিলাম। লাইন ধরেছি, টিকিট পাইনি। কাউন্টার থেকে বলে দিয়েছে নেই, তাই ফিরে যাচ্ছি।’
ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জগামী পথে চলাচলকারী তিস্তা এক্সপ্রেসে ঢাকা থেকে দেওয়ানগঞ্জ যাওয়ার জন্য চারটি চেয়ার সিট চেয়েছিলেন রায়হানুল ইসলাম; পাননি। রবিবার সকালে কমলাপুরে এসে রাত কাটিয়ে সোমবার কাউন্টার পর্যন্ত পৌঁছে তিনি জানতে পারেন টিকিট নেই। অনিদ্রা, সেই সঙ্গে ক্ষোভে তাঁর চোখ দেখাচ্ছিল লাল।
রাজধানী থেকে রাজশাহী যাওয়ার এসি শ্রেণির টিকিট চেয়ে শোভন টিকিট পান আফজাল হোসেন। তিনি জানান, টিকিট বিক্রি শুরুর ২০ মিনিট পরই শোনা যায় এসি টিকিট নেই।
রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের এসি টিকিট পাননি নজরুল, নাসিম ও জয়নাল। অথচ তিন বন্ধু আগের রাতে স্টেশনে অবস্থান করেন। বারবার অনুরোধেও মেলেনি কাঙ্ক্ষিত টিকিট।
ঢাকা-খুলনা পথের সুন্দরবন ও চিত্রা ট্রেনের টিকিট বিক্রির পর শুরু থেকেই এসি টিকিট নেই বলে রব ওঠে কাউন্টারের ভেতর থেকে। সুন্দরবন ট্রেনের টিকিট নিতে আসা জয়তি ইসলাম বলেন, ‘যা চাইলাম, তা পাইলাম না’।
সকাল থেকে টিকিটপ্রত্যাশী নারীদের কাউন্টারে ভিড় ছিল। অভিযোগ আছে, সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, রেল কর্মকর্তা, বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার নামে বা তাদের জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কামরার টিকিট অলিখিতভাবেই বরাদ্দ রাখা হচ্ছে।
সাধারণ ক্রেতাদের টিকিট না পাওয়ার বিষয়টি জানানো হলে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আমজাদ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ট্রেনের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত টিকিটের চাহিদা বেশি। সে অনুসারে কোচ নেই। তবে এবার ঢাকা-খুলনা পথে বিশেষ ট্রেনের পুরোটাই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত।
কমলাপুরে গতকাল বিক্রির জন্য বরাদ্দ ছিল ২৭ হাজার ৪৬১টি টিকিট। সকাল ৮টা থেকে কমলাপুর স্টেশনে ২৬টি কাউন্টারে টিকিট বিক্রি শুরু হয়। আন্তনগর ট্রেনের টিকিটের পাশাপাশি বিশেষ ট্রেনের তিন হাজার ৯৪৭টি অতিরিক্ত টিকিট কাউন্টার থেকে দেওয়া হয়।
গতকাল উপচে পড়া ভিড় ছিল ২৬টি কাউন্টারেই। কালোবাজারে টিকিট বিক্রির অভিযোগও উঠেছে। এ কারণে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকের ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদল আগের দিন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে গেছে। এ কারণে গতকাল ব্যবস্থাপনা জোরদারও করা হয়।
সুত্র:কালের কন্ঠ, ৫ জুন, ২০১৮