কুড়িগ্রাম-তিস্তা রেল পথের রাজারহাট রেল স্টেশনের কাছে একটি অংশে দুই লাইনের সংযোগ স্থলের ফিসপ্লেটে নাট-বোল্ট নেই। ফলে ওই অংশ দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে ট্রেন চলাচল করছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় অধিবাসীরা। রেলপথের কাছে একটি দোকানের কর্মচারী অভিযোগ করে বলেন, ‘গেইটম্যানকে কয়েকবার দেখানোর পরও ওই স্থানে নাট-বোল্ট লাগানোর কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মচারী রেল লাইনের ফিসপ্লেটের নাট-বোল্ট বিহীন অংশ দেখিয়ে বলেন, ‘লাইনের এ অংশে কোনও ফুটা নাই। খালি লাইন বসিয়ে গেছে। ওই অংশ দিয়ে ট্রেন চলার সময় বিকট শব্দ হয় এবং রেল পথ নড়ে ওঠে।’
কুড়িগ্রাম থেকে রাজারহাট হয়ে সিঙ্গেরডাবড়ী পর্যন্ত রেল পথ ঘুরে দেখা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কুড়িগ্রামের রেলপথ সংস্কার করা হয়েছে। তিস্তা থেকে কুড়িগ্রাম রেল স্টেশন পর্যন্ত পুরনো লাইন বদলানো হয়েছে। বদলানো হয়েছে স্লিপার, বেশ কিছু অংশে ফেলা হয়েছে পাথর। ফলে ট্রেনের গতি এবং বিড়ম্বনার কিছুটা অবসান হলেও রেলপথের কোথাও কোথাও প্রয়োজনীয় সংখ্যক নাট-বোল্ট ও ডগস্পাইন না থাকায় ট্রেন চলাচলে এখনও ঝুঁকি রয়েছে। ট্রেনে যাতায়াত করা কয়েকজন যাত্রী ও রেলপথ সংলগ্ন এলাকাবাসী একই অভিযোগ করে।
ফিসপ্লেটে নাট-বোল্ট না থাকা এবং লাইনের কোথাও কোথাও ছিদ্র না থাকার কথা স্বীকার করে তিস্তা-কুড়িগ্রাম রেলপথের পারমানেন্ট ওয়ে ইন্সপেক্টর (পিডব্লিউআই) দীপক কুমার রায় জানান, ‘আপাতত কাজ শেষ হলেও চেকিং বাকি রয়েছে। শিগগিরই চেকিং করে এসব ত্রুটি দূর করা হবে।’
রেলপথে পাথরের ঘাটতি সম্পর্কে এই পিডিউব্লিআই জানান, রেলওয়ের নিজস্ব কিছু পাথর রেললাইনে দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিলে আরও পাথর ফেলা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, তিস্তা-কুড়িগ্রাম-রমনাবাজার সেকশনের ৫০ কিলোমিটার রেলপথে ৮টি রেলওয়ে স্টেশন রয়েছে। এরমধ্যে তিস্তা থেকে কুড়িগ্রাম পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার রেলপথটি ব্রিটিশ আমলে এবং কুড়িগ্রাম থেকে রমনা বাজার (চিলমারী) পর্যন্ত রেলপথটি ১৯৬৮ সালে নির্মিত হয়। তবে দীর্ঘ সময় লাইনের সংস্কার না হওয়ায় নষ্ট স্লিপার ও পাথরের অভাবে রেলপথটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। স্থানীয় মানুষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ৭ সেপ্টেম্বর কুড়িগ্রামের চিলমারীতে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি’র উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ অঞ্চলের রেলওয়ের উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সংস্কার কাজ শুরু হলেও কাজের মান নিয়ে জনসাধারণের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
জেলা রেল-নৌ যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণ কমিটির প্রধান সমন্বয়ক নাহিদ হাসান নলেজ রেলের সংস্কার কাজের মান নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন,‘রেল লাইনের ব্যাবহিত অনেক ফিস প্লেটে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নাট-বোল্ট লাগানো হয়নি। পাথর ফেলানো এখনও শেষ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় ঝুঁকি নিয়ে ট্রেন চলাচল করছে।
রেলপথ কর্তৃপক্ষকে বিষয়গুলো অবহিত করার পরও কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন এই সমন্বয়ক
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ রেলওয়ে লালমনিরহাট ডিভিশনের বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলামের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
উল্লেখ্য, তিস্তা-কুড়িগ্রাম রেলপথে বর্তমানে প্রতিদিন একটি লোকাল ট্রেন দু‘বার এবং ঢাকাগামী রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের সংযোগকারী একটি শাটল ট্রেন যাওয়া আসা করে।
সুত্র:বাংলা ট্রিবিউন