আসাদুজ্জামান রাসেল :
পশ্চিম রেলের অফিসার্স কোয়ার্টারের কোটি টাকার অর্ধশতাধিক মেহগনি গাছ লোপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রকাশ্যে নিলাম না করে ৩০ বছরের পুরনো এসব গাছ গোপনে কেটে নিয়েছেন পশ্চিম রেলওয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা। গাছগুলো কেটে আলামত নিশ্চিহ্ন করতে শিকড় উপড়ে ফেলে গোড়া মাটি দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। কয়েকটি গাছের গুঁড়ি পুড়িয়েও আলামত নষ্টের চেষ্টা করা হয়েছে।
জানা যায়, মহানগরীর শ্রীরামপুরে রেলওয়ের স্টাফ কোয়ার্টার এলাকায় র্যাব-৫ এর একটি ক্যাম্প ছিল। বছর তিনেক আগে র্যাব-৫ এর সদর দফতর মহানগরীর মোল্লাপাড়া এলাকায় স্থানান্তর হলে কোয়ার্টারগুলোতে পশ্চিম রেলওয়ের জিএম ও প্রধান প্রকৌশলীসহ কর্মকর্তারা বসবাস করছিলেন। কিছু দিন আগে রেলকলোনি নামে পরিচিত স্টাফ কোয়ার্টার ক্যাম্পাসে থাকা পুরাতন মেহগনি গাছগুলো একটি-দুটি করে কাটা শুরু হয়। গাছগুলো কাটার সময় কোয়ার্টারের মূল ফটক বন্ধ রাখা হতো। এভাবে গত এক মাসে স্টাফ কোয়ার্টার এলাকায় থাকা অর্ধশতাধিক মেহগনি গাছ কেটে সাবাড় করা হয়েছে।
পশ্চিম রেলের কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের বসবাসের জন্য প্রায় ৩০ বছর আগে শ্রীরামপুর এলাকায় এ কোয়ার্টার নির্মাণ করা হয়। আর কেটে নেয়া মেহগনি গাছগুলো ওই সময় লাগানো হয়। এ হিসেবে গাছগুলোর বয়স কমপক্ষে ৩০ বছর হয়েছে। গাছগুলোর একেকটির দাম এক লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা। ফলে অর্ধশত মেহগনি গাছের দাম কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে কর্মচারীরা জানান। এদিকে রেলকলোনির এই স্টাফ কোয়ার্টারসহ অভ্যন্তরে থাকা সব সম্পদ দেখভালের দায়িত্ব পালন করেন উপনির্বাহী প্রকৌশলী নাজিত কায়সার।
গত শুক্রবার সরেজমিনে দেখা গেছে, মেহগনি গাছগুলোর গোড়া থেকে কেটে নেয়ার পর শিকড় উপড়ে ফেলা হয়েছে। ফলে লোপাট করা গাছের প্রকৃত সংখ্যা নিরূপণ সম্ভব হয়নি। তবে ৫৮টি গুঁড়ির চিহ্ন পাওয়া গেছে। তবে কিছু চিহ্ন হারিয়ে গেছে। এ কারণে কেটে নেয়া গাছের প্রকৃত সংখ্যা কত তা বের করা সম্ভব হয়নি। কোয়ার্টারে বসবাসরত কয়েকজন কর্মচারী জানান, কোয়ার্টারের অভ্যন্তরে মেহগনি গাছ কাটা হয়েছে রাতের বেলা। এ সময় মূল ফটক বন্ধ রাখা হয়। প্রমাণ ঢাকতে গর্তগুলোতে মাটি চাপা দেয়া হয়েছে।
রেলওয়ে কর্মচারীরা জানান, এসব গাছ গোপনে কেটে নিয়ে পশ্চিম রেলওয়ের বড় কর্মকর্তারা ভাগাভাগি করেছেন। তারা নিজের বাসাবাড়ি ও অনেকেই গ্রামের বাড়িতেও মেহগনি কাঠ পাঠিয়েছেন। পুরো বিষয়টি তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি করেছেন তারা।
উপনির্বাহী প্রকৌশলী নাজিত কায়সার জানান, এ ব্যাপারে মোবাইল ফোনে কিছু বলবেন না। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে হলে রেলভবনে তার দফতরে গিয়ে যোগাযোগ করতে হবে। উপসহকারী প্রকৌশলী জানান, মেহগনি গাছ কাটার বিষয়ে মহাব্যবস্থাপক (জিএম) এবং প্রধান প্রকৌশলীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলতে পারবেন। এ ব্যাপারে তার কিছু বলার নেই। জিএম ও প্রধান প্রকৌশলী মেহগনি গাছগুলো কাটার নির্দেশ দিয়েছেন। কারা কেটেছে সেটাও তিনি বলতে পারেননি।
রাজশাহীর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) সাজ্জাদ হোসেন জানান, রেল কোয়ার্টারের মেহগনি গাছ কাটার ব্যাপারে বন বিভাগের কিছু জানা নেই। সরকারি বিধি অনুযায়ী গাছ কাটতে হলে বন বিভাগের কাছে আগে আবেদন করতে হয়। বন বিভাগ গাছের সরেজমিন পরিস্থিতি দেখে মূল্য নির্ধারণের পর কাটার অনুমতি দেয়। তবে এ ধরনের কোনো আবেদন আমি পশ্চিম রেলের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।
গাছ কাটার জন্য প্রকাশ্যে নিলাম এবং আনুষঙ্গিক বিধিবিধান অনুসরণ করা হয়েছে কিনা- এ ব্যাপারে পশ্চিম রেলের প্রধান এস্টেট কর্মকর্তা আবদুল মান্নান জানান, বিষয়টি দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে প্রকৌশল বিভাগ। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে হলে তাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। তবে অফিস চলাকালীন যোগাযোগ করতে হবে। পশ্চিম রেলওয়ের জিএম খায়রুল আলম ও প্রধান প্রকৌশলীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা ফোন ধরেননি।
সুত্র:শেয়ার বিজ, জানুয়ারি ২৮, ২০১৮