সুজিত সাহা:
চীন থেকে আমদানি করা ডিজেল ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট (ডেমু) ট্রেন নিয়ে শুরু থেকেই বিপত্তিতে আছে রেলওয়ে। ট্রেনগুলো নষ্ট হলেও মেরামতের বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ২০১৬ সালে ডেমু ট্রেন মেরামতে ৩০৮ কোটি টাকার একটি ওয়ার্কশপ নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয়া হলেও সমালোচনার মুখে সেটি থেমে যায়। ফলে রুটিন মেরামত হলেও বড় ধরনের ওভারহোলিং ছাড়াই ধীরে ধীরে চলাচল অনুপযোগী হচ্ছে ট্রেনগুলো। ট্রেনগুলো দিয়ে পরিচালিত কমিউটার সার্ভিসও প্রায়ই বন্ধ থাকছে।
রেলের পরিবহন বিভাগের দেয়া তথ্যানুসারে, বর্তমানে ২০ সেট ডেমু ট্রেনের (প্রতি সেটে দুই মুখে দুটি ইঞ্জিনসহ তিনটি কোচ) ১২টি চলমান রয়েছে। বাকি আটটি র্যাক মেরামতের জন্য পড়ে আছে। যদিও এর অর্ধেকেরই বেশি যন্ত্রাংশ আমদানি ছাড়া মেরামতের অনুপযোগী বলে জানিয়েছেন ওয়ার্কশপ কর্মকর্তারা। ডেমু ট্রেনের ইঞ্জিন কোচের নিচের দিকে হওয়ায় বিশেষায়িত কারখানা ছাড়া ওভারহোলিংয়ের সুযোগ নেই। ফলে আমদানির পাঁচ বছর অতিক্রান্ত হলেও এসব কোচের ওভারহোলিং করা যায়নি।
সম্প্রতি ডেমু ট্রেন নষ্ট থাকায় কমিউটার ট্রেন সার্ভিসে জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে রেলওয়েসংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো। সম্প্রতি ডেমু ট্রেনগুলোকে নিয়মিত মেরামত কার্যক্রমে নিয়ে যেতে চিঠি দেয় রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তার (ডিটিও) দপ্তর। বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশলীকে দেয়া ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ইঞ্জিন ক্যাবসহ একাধিক যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ও জনপ্রিয় রুটে একাধিক কমিউটার সার্ভিস বন্ধ হয়ে আছে। ৩ মার্চ দেয়া ওই চিঠিতে দ্রুত সময়ের মধ্যে নষ্ট ডেমু ট্রেন মেরামত উপযোগী করতে সহযোগিতা চেয়েছেন ডিটিও মো. নাসির উদ্দিন।
রেলের নথি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, চলতি বছরের ১ মার্চ নোয়াখালী-লাকসাম-কুমিল্লা রুটের ডেমু ট্রেনটি মেরামতের জন্য পাহাড়তলীতে নিয়ে আসা হলেও এখন পর্যন্ত মেরামতকাজ শেষ হয়নি। বাধ্য হয়ে প্রায় এক মাস ওই রুটের কমিউটার সার্ভিসটি বন্ধ রয়েছে। ২০১৮ সালের ২৮ নভেম্বর ১০০৩৯ ইঞ্জিন ক্যাব ও ১১ জুলাই থেকে ১০০১৭ ইঞ্জিন ক্যাব নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। ১০০৩৭ ইঞ্জিন ক্যাবটি মেরামত করে কিছুদিন চালানো হলেও ফের নষ্ট হয়ে গেছে। এ অবস্থায় ওভারহোলিংয়ের মাধ্যমে ডেমু ট্রেনগুলো মেরামতের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে রেলের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা পরামর্শ দিয়েছেন।
জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক সৈয়দ ফারুক আহমেদ বণিক বার্তাকে বলেন, রেলের বর্তমান কারখানায় যতটুকু সম্ভব ডেমুগুলো মেরামত করা হচ্ছে। এর পরও বিশেষায়িত মেরামত কার্যক্রমের জন্য একটি কারখানা স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাই হচ্ছে। আশা করছি, কারখানা স্থাপন হলে ডেমু ট্রেনগুলো নির্বিঘ্নে যাত্রীসেবা দিতে পারবে।
এদিকে,সিলেট-আখাউড়া, জয়পুরহাট-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-কুমিল্লা রুটের কমিউটার সার্ভিসগুলোও ডেমু নষ্ট থাকার কারণে বন্ধ রয়েছে। এর আগে বিভিন্ন জনপ্রিয় রুটে দুই সেট ডেমু একসঙ্গে সেবা দিলেও বর্তমানে আটটি সেট নষ্ট থাকায় প্রতিটি রুটেই একটি মাত্র সেট দিয়ে কমিউটার সার্ভিস চালানো হচ্ছে। এর পরও প্রতি মাসেই দীর্ঘ সময়ের জন্য ডেমুগুলো নষ্ট থাকায় রেলের স্বল্প দূরত্বের ট্রেন সার্ভিস কমিউটার ট্রেনসেবা বিঘ্নিত হচ্ছে।
সুত্র:বণিক বার্তা, মার্চ ২৮, ২০১৯