ইসমাইলআলী: গত বছর রেলওয়েকে ১০টি মিটারগেজ ইঞ্জিন সরবরাহ করে দক্ষিণ কোরিয়ার হুন্দাই রোটেম। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণে এগুলো কেনা হয়েছে। তবে ইঞ্জিনগুলোয় দরপত্রের শর্তানুসারে অলটারনেটর ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ সংযোজন করেনি কোম্পানিটি। এজন্য ইঞ্জিনের মূল্য পরিশোধ প্রায় ১১ মাস আটকে রেখেছে রেলওয়ে। অবশেষে ইঞ্জিনগুলোর অলটারনেটর বদলে দিতে সম্মত হয়েছে হুন্দাই রোটেম।
যদিও এর আগে তিন দফা চিঠি দেয়া হলেও কোনো জবাব দেয়নি কোম্পানিটি। তবে এবার অলটারনেটর পরিবর্তনের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ছয় মাস সময় চেয়েছে হুন্দাই রোটেম। এ সময়ের মধ্যে ইঞ্জিনগুলোর ডিজাইন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হবে অলটারনেটর পরিবর্তন করা সম্ভব কি না। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঋণের মেয়াদও ছয় মাস বাড়াতে এডিবিকে চিঠি দিতে যাচ্ছে রেলপথ মন্ত্রণালয়।
সূত্রমতে, ২০১৮ সালের মে মাসে ইঞ্জিনগুলো কেনায় হুন্দাই রোটেমের সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। আর ইঞ্জিনগুলো দেশে আসে গত বছর আগস্টে। তবে অলটারনেটরসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশ ভিন্ন মডেলের সংযোজন করায় ইঞ্জিন গ্রহণে আপত্তি তোলেন তৎকালীন প্রকল্প পরিচালক (পিডি)। এর পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠন করলে তাদের প্রতিবেদনেও নিম্নমানের যন্ত্রাংশ সংযোজনের বিষয়টি উঠে আসে। ২৫ ফেব্রুয়ারি এ প্রতিবেদন দেয়া হয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২১ মার্চ হুন্দাই রোটেমকে চিঠি দেয় রেলওয়ে। তবে কোনো উত্তর না দেয়ায় ২৫ এপ্রিল ও পরে ২৫ মে আরও দুই দফা চিঠি দেয়া হয় কোম্পানিটিকে। প্রতিবারই ইঞ্জিনগুলোয় সংযোজিত টিএ-৯ মডেলের অলটারনেটর বদলে টিএ-১২ সংযোজনের কথা বলা হয়। এজন্য দুই মাস সময় দেয়া হয়েছিল। কিন্তু হুন্দাই রোটেম এর কোনো উত্তর দেয়নি। অবশেষে গত ২২ জুন চিঠি দেয় ইঞ্জিন সরবরাহকারী কোম্পানিটি।
এতে বলা হয়, ইঞ্জিনগুলোর বিদ্যমান ডিজাইনে টিএ-১২ মডেলের অলটারনেটর সংযোজন সম্ভব কি না, তা যাচাই-বাছাই করে দেখতে ছয় মাস লাগবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্পটির বর্তমান পিডি মোহাম্মদ হাসান মনসুর শেয়ার বিজকে বলেন, ইঞ্জিনগুলো প্রায় ১১ মাস ধরে বসে আছে। এ জটিলতা নিরসনে চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু কেউ সহযোগিতা করছে না। হুন্দাই রোটেমকে তিন দফা চিঠি দেয়ার পর তারা ছয় মাস সময় চেয়েছে। এর মধ্যে তারা যাচাই-বাছাই করে দেখবে বিদ্যমান ডিজাউনে অলটারনেটর পরিবর্তন করা সম্ভব কি না।
তিনি আরও বলেন, যদি কোম্পানিটি অলটারনেটর পরিবর্তন করে দেয় তাহলে ইঞ্জিনের পুরো মূল্য পাবে। আর যদি অলটারনেটর পরিবর্তন করা সম্ভব না হয় তাহলে ওই বাবদ মূল্য কেটে রেখে দেয়া হবে। তবে সে মূল্য কত হবে তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি বলে জানান তিনি।
এদিকে এডিবিকে দেয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রকল্পটির মেয়াদ ও এডিবির ঋণ চুক্তির মেয়াদ আজ (৩০ জুন) শেষ হওয়ার কথা। তবে প্রকল্পের মেয়াদ ছয় মাস বৃদ্ধির জন্য পরিকল্পনা কমিশনে আবেদন করা হয়েছে। আর অলটারনেটরও পরিবর্তন করা সম্ভব কি না, তা যাচাই-বাছাই করে দেখতে ছয় মাস সময় চেয়েছে হুন্দাই রোটেম। এজন্য ঋণচুক্তির মেয়াদও ছয় মাস বৃদ্ধি করা হোক।
উল্লেখ্য, ১০টি মিটারগেজ ইঞ্জিন (লোকোমোটিভ) কেনার চুক্তিমূল্য ছিল তিন কোটি ৭৯ লাখ ৬৩ হাজার ৪০০ ডলার। এর মধ্যে ২৫ শতাংশ অর্থ অগ্রিম দেয়া হয়। বাকি অর্থের মধ্যে ইঞ্জিনগুলো দেশে আসার পর ৬৫ শতাংশ পরিশোধের কথা। আর গুণগত মান যাচাই শেষে বাকি ১০ শতাংশ অর্থ পরিশোধের শর্ত ছিল। তবে নি¤œমানের যন্ত্রাংশ সংযোজনের জন্য ইঞ্জিনের মূল্য পরিশোধ আটকে যায়।
তথ্যমতে, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি জমা দেয়া তদন্ত প্রতিবেদনে হুন্দাই রোটেম ও প্রি-শিপমেন্ট ইন্সপেক্টর সিঙ্গাপুরের সিসিআইসিকে অভিযুক্ত করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশও করে তদন্ত কমিটি। তবে অজ্ঞাত কারণে তা গোপন করে রাখা হয়েছে। আর হুন্দাই রোটেম বা সিসিআইসিÑকারও বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা
নেয়া হয়নি। তবে শেয়ার বিজসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ১০ ইঞ্জিনের অনিয়মের বিষয়ে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইঞ্জিন কেনার অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এদিকে ইঞ্জিনগুলোর কার্যকারিতা যাচাইয়ে গত ২২ এপ্রিল কারিগরি কমিটি গঠন করে রেলওয়ে। ওই কমিটি ইঞ্জিনগুলোর কারিগরি ত্রুটি-বিচ্যুতি খতিয়ে দেখছে। কারিগরি কমিটির প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে রেলওয়ে।
বিষয়টি নিয়ে জানতে রেলপথ সচিব মো. সেলিম রেজার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি। পরে এসএমএস দেয়া হলে ও একাধিকবার কল করলেও তিনি উত্তর দেননি। এমনকি রেলভবনে তার বক্তব্য নিতে সরাসরি যোগাযোগ করলেও তিনি দেখা করতে সম্মত হননি।
সূত্র:শেয়ার বিজ, জুন ৩০, ২০২১