‘জমি দিয়ে বিপাকে রেলওয়ে, আদায় হয় না ইজারা মূল্য’ শীর্ষক যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গতকালের শেয়ার বিজে, তা বিশেষ আলোচনার দাবি রাখে। খবরে জানা যায়, রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ১২টি মার্কেট নির্মাণের জন্য ১৯৮৫ সালে রেলওয়ের অব্যবহƒত ১২ একর ৫৫ শতক জমির ইজারা বাবদ পাওনা আদায় করতে পারছে না রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। আর এ পাওয়া বকেয়া রয়েছে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সংস্থার কাছেই; যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। রেলের পাওনা অর্থ আদায়ে জরুরি পদক্ষেপ নেয়া জরুরি বলে মনে করি।
রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক চাপে এভাবেই বিভিন্ন সময়ে সরকারি, বেসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন নানা সময় রেলের অব্যবহƒত জমি ইজারা নেয়। প্রতি বছর ইজারা মূল্য অগ্রিম পরিশোধের শর্তে জমি দেয়া হলেও বেশিরভাগ সরকারি প্রতিষ্ঠানই তা পালন করেনি। কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও ইজারা মূল্য আটকে আছে বছরের পর বছর। এভাবে ২০১০ সাল পর্যন্তই রেলওয়ের আটকে থাকা পাওনা প্রায় ৪১ কোটি টাকা।
সাধারণত ঋণগ্রহীতা প্রভাবশালী হলে পাওনা আদায় করতে পারেন না ঋণদাতা। তখন তিনি মাফ করতে বাধ্য হন। সামনে বলতে না পারলেও আড়ালে বলেন, ‘দান করে দিয়েছি’। অনিচ্ছায় সম্প্রদান করা কিংবা হাতছাড়া জিনিস দান করার বিষয়টি অনেক পুরোনো। ক্ষমতায় পেরে উঠতে না পেরে ভুক্তভোগী হিন্দু বলতেন, ‘উড়ো খই গোবিন্দায় নমঃ’। মানে শ্রীকৃষ্ণকে দান করতেন।
পাওনা টাকা চাওয়ায় উত্তমর্ণ মারা গেছেন অধমর্ণের হাতে। এমন ঘটনা আগেও ঘটত। এখনও ঘটে। এখনও ঘাতকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন খাতক। গণমাধ্যমে প্রায়ই খবর আসে ‘পাওনা টাকা চাওয়ায় হত্যা’। কিন্তু রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান রেলওয়ে নিরীহ দুর্বল মানুষের সমতুল্য নয়। কেন জমি দিয়ে বিপাকে পড়বে? কেন পাওনা ‘মাফ’ করে দিতে বাধ্য হবে।
অনেকেই মনে করেন, এখানে কোনো মহলের বোঝাপড়া (সহজ ভাষায় যোগসাজশ) রয়েছে। রেলওয়ের মহাপরিচালকের কথায় তারই ইঙ্গিত মেলে। বিভিন্ন সময় প্রশাসন, মন্ত্রণালয় বা রাজনৈতিক চাপে রেলওয়ে অব্যবহƒত অনেক জমি ইজারা দিতে বাধ্য হয়েছিল। কিন্তু ইজারা গ্রহীতা বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা এ অর্থ পরিশোধে গড়িমসি করে যাচ্ছে।
বিভিন্ন স্থানে রেলওয়ের বেদখল হওয়া ভূসম্পত্তি দখলমুক্ত করলে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায় সম্ভব। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে দখলদার যত প্রভাবশালী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান হোক না কেন, কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। বলা হয়ে থাকে, রেলে উচ্ছেদের প্রধান বাধা মামলা, আইনি জটিলতা ও রাজনৈতিক প্রভাব। ফলে রেলের ভূ-সম্পত্তি উদ্ধারে নীতিমালা থাকলেও কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। রেলওয়ের দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশ এবং ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালীদের অসহযোগিতাও থাকতে পারে। ব্যক্তি দায়ী হলে তাদের আইনের আওতায় এসে শাস্তি দেয়া যেতে পারে। কিন্তু দখলদার কিংবা রাষ্ট্রীয় সংস্থা হলে আন্তঃমন্ত্রণালয় যোগাযোগের মাধ্যমে বেহাত হওয়া জমি উদ্ধারে ব্যবস্থা নিতে হবে।
সূত্র:শেয়ার বিজ, ২৮ নভেম্বর ২০২১