ইসমাইল আলী:
বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই রেল সেবাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। পৃথক মন্ত্রণালয় গঠনের পাশাপাশি বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে কয়েকগুণ। এতে রেলের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নও বেড়েছে। এ সময় রেলের বহরে যুক্ত হয়েছে নতুন বেশকিছু ইঞ্জিন। এতে রেলওয়ের ইঞ্জিন বিকল হওয়ার (ফেইলিওর) ঘটনা অনেকটা কমেছে।
২০১১ সালের পর থেকে ৪৬টি ইঞ্জিন কিনেছে রেলওয়ে। এতে গত সাত বছরে রেলের ইঞ্জিন ফেইলিওর কমেছে ৫৫ শতাংশের বেশি। রেলওয়ের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে রেলের বহরে বেশকিছু ইঞ্জিন যুক্ত হবে। এতে ইঞ্জিন ফেইলিওর আরও কমবে।
তথ্যমতে, স্বাধীনতার পর থেকেই অবহেলিত ছিল রেলওয়ে। এতে আয়ুষ্কাল পেরিয়ে গেলেও রেলের বহরে নতুন ইঞ্জিন যুক্ত হওয়ার প্রবণতা ছিল খুবই কম। তবে বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পরই কোরিয়ার অর্থনৈতিক সহায়তায় (ইডিসিএফ) কেনা হয় ৯টি মিটারগেজ ইঞ্জিন। ২০১১ সালে এগুলো রেলের বহরে যুক্ত হয়। আর ২০১৩ সালে জাপান সরকারের সহায়তায় (জাইকা) আরও ১১টি মিটারগেজ ইঞ্জিন কেনা হয়।
এদিকে ২০১২ সালে ভারত থেকে ১০ ব্রডগেজ ইঞ্জিন কেনা হয়। পরের বছর যুক্ত হয় আরও ১৬টি ইঞ্জিন। এসব ইঞ্জিন যুক্ত হওয়ায় রেলের যাত্রী ও পণ্য পরিবহন সেবা গতি পায়। বাড়ানো হয় ট্রেন সংখ্যাও। যদিও এখনও প্রয়োজনের তুলনায় কম ইঞ্জিন দিয়েই রেলওয়ের সেবা পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে নতুন ইঞ্জিন যুক্ত হওয়ার পর বিকল হওয়ার প্রবণতা কমেছে।
সূত্র জানায়, ২০০৮ সালে সারা দেশে ৩৯৭টি ইঞ্জিন ফেইলিওরের ঘটনা ঘটে। পরের তিন বছর তা ক্রমান্বয়ে বাড়ে। ২০০৯ সালে ইঞ্জিন ফেইলিওর হয় ৩৯৮টি, ২০১০ সালে ৪১৯টি ও ২০১১ সালে ৪২৪টি। গত ১০ বছরের এটি সর্বোচ্চ ইঞ্জিন ফেইলিওরের ঘটনা। ২০১১ সাল থেকে রেলের বহরে নতুন ইঞ্জিন যুক্ত হওয়ায় বিকল হওয়ার ঘটনাও কমছে।
২০১২ ইঞ্জিন ফেইলিওর কমে দাঁড়ায় ৪১৪টি। ২০১৩ সালে তা আরও কমে দাঁড়ায় ৩৯৩টি। ২০১১ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে ৪৬টি ইঞ্জিন যুক্ত হয় রেলের বহরে। এতে ২০১৪ সালে ইঞ্জিন ফেইলিওর দ্রুত কমতে থাকে। সে বছর ইঞ্জিন ফেইলিওর হয় ৩১০টি। ২০১৫ সালে তা আরও কমে দাঁড়ায় ২৩৯টি, ২০১৬ সালে ২৩৬টি ও ২০১৭ সালে ১৮৯টি। অর্থাৎ ২০১১ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সাত বছরে রেলের ইঞ্জিন ফেইলিওর কমেছে ২৩৫টি বা ৫৫ দশমিক ৪২ শতাংশ।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আমজাদ হোসেন শেয়ার বিজকে বলেন, স্বাধীনতার পর বহু বছর রেলওয়ে উপেক্ষিত ছিল। সে সময় নতুন ইঞ্জিন-কোচ কেনা হয়নি। ফলে ইঞ্জিন ফেইলিওর বেড়ে গিয়েছিল। তবে বর্তমান সরকারের মেয়াদে ৪৬টি নতুন ইঞ্জিন কেনার পর এ প্রবণতা অনেকটা কমে আসে। আগামীতে নতুন ইঞ্জিন যুক্ত হলে এ হার আরও কমানো যাবে।
তিনি আরও বলেন, গত পাঁচ বছরে রেলের জন্য কোনো ইঞ্জিন কেনা হয়নি। আর বিদ্যমান ২৭২টি ইঞ্জিনের মধ্যে ১৯৬টির আয়ুষ্কাল পেরিয়ে গেছে। উপরন্তু রাজস্ব খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকা ও জনবল সংকটের কারণে ইঞ্জিনগুলো সঠিক সময়ে ওভারহোলিং করা যায়নি। এর পরও সেবা প্রদানকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়। এ জন্য বিদ্যমান ইঞ্জিনের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা হচ্ছে। ফলে ইঞ্জিন ফেইলিওর কমেছে।
রেলওয়ের সূত্রমতে, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণে আরও ১০টি মিটারগেজ ইঞ্জিন কেনায় গত ১৭ মে চুক্তি সই করা হয়েছে। ২৯৭ কোটি টাকা ব্যয়ে এসব ইঞ্জিন আগামী ২৪ মাসের মধ্যে সরবরাহ করবে কোরিয়ার হুন্দাই রোটেম কোম্পানি। এছাড়া কোরিয়া সরকারের ঋণে আরও ২০টি ইঞ্জিন মিটারগেজ ইঞ্জিন কেনার প্রক্রিয়া চলছে। একই কোম্পাইি এ ইঞ্জিনগুলো সরবরাহ করবে।
এদিকে সরবরাহকারীর ঋণে (বায়ার্স ক্রেডিট) ৭০টি মিটারগেজ ইঞ্জিন কেনার প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে রেলওয়ে। এর মধ্যে ৩০টি সম্পূর্ণ, ২৫টি অর্ধেক খোলা ও ১৫টি পুরোপুরি খোলা অবস্থায় আনা হবে। অর্ধেক খোলা ও পুরোপুরি খোলা ইঞ্জিনগুলো পার্বতীপুরে কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানায় সংযোজন করা হবে। এ ইঞ্জিনগুলোও সরবরাহ করবে কোরিয়ার হুন্দাই রোটেম। আবার এসব ইঞ্জিন কেনায় ঋণের সংস্থানও করবে কোম্পানি। এছাড়া এডিবির ঋণে আরও ৪০টি ব্রডগেজ ইঞ্জিন কেনায় পৃথক আরেকটি প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে।
রেলমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক বলেন, ১৪০টি ইঞ্জিন কেনার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এর মধ্যে ৭০টি একই কোম্পানি সরবরাহ করবে। এর বাইরে অন্য কোম্পানি থেকে দুই দফায় ৪০ ও ২০টি ইঞ্জিন কেনা হচ্ছে। এছাড়া বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর রেলের বহরে ২৭০টি যাত্রীবাহী কোচ যোগ হয়েছে। আরও ২৫০টি কোচ কেনার প্রক্রিয়া চলছে। এগুলো কেনা সম্পন্ন হলে রেলের সেবার মান অনেক উন্নত হবে।
সুত্র;শেয়ার বিজ