বাংলাদেশে এখনও কোনো বাণিজ্যিক রেল লাইনে বিদ্যুতায়ন করা হয়নি। যদিও ভারত এক্ষেত্রে অনেকদূর এগিয়ে গেছে। আগামী তিন বছরের মধ্যে ভারতের সমস্ত ডিজেলচালিত লোকোমোটিভ বন্ধ করে তার বদলে বিদ্যুৎচালিত ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা করেছে ভারত। ডিজেল ইঞ্জিন রক্ষণাবেক্ষণ ও জ্বালানি খরচের বিপুল ব্যয় সাশ্রয়ের জন্যই এ কাজটি করছে ভারত।
বাংলাদেশে প্রথম বৈদ্যুতিক ট্রেন হচ্ছে মেট্রোরেল
বাংলাদেশের প্রথম বাণিজ্যিকভাবে পরিচালিত বৈদ্যুতিক ট্রেন লাইন হতে যাচ্ছে মেট্রোরেল। ঢাকা শহরের যানজট কমাতে ভূমিকা রাখবে এ রেল।
তবে মেট্রোরেলের পাশাপাশি বাংলাদেশ রেলওয়েতে বৈদ্যুতিক ট্রেন সার্ভিস চালু করার পরিকল্পনা করেছে সরকার। নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা হয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্ত ইলেক্ট্রিক ট্রাকশন (ওভারহেড ক্যাটেনারি ও সাবস্টেশন নির্মাণসহ) প্রবর্তনের লক্ষ্যে একটি সমীক্ষা প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে প্রেরণ করা হয়েছে।
সমীক্ষা কার্যক্রম সম্পাদন শেষে তার আলোকে নারায়ণগঞ্জ হতে ঢাকা হয়ে জয়দেবপুর পর্যন্ত ইলেক্ট্রিক ট্রেন সার্ভিস চালুর বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
সংসদে তথ্য রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক
স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে গত ১২ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তরপর্বে সরকারদলীয় সংসদ সদস্য দিদারুল আলমের প্রশ্নের জবাবে রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক বৈদ্যুতিক ট্রেনলাইনের সমীক্ষার পরিকল্পনার তথ্য জানান ।
তিনি জানান, গত বছরের ১৩ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পর্যায়ক্রমে বৈদ্যুতিক ট্রেন চালুর অংশ হিসেবে গাজীপুর-নারায়ণগঞ্জ বৈদ্যুতিক ট্রেন প্রথম চালু করতে হবে মর্মে নির্দেশনা প্রদান করেছেন।
বিদ্যুৎ উৎপাদনের সমস্যা
এক্ষেত্রে বাংলাদেশের সমস্যা ছিল বিদ্যুৎ উৎপাদনের। বিদ্যুৎচালিত ট্রেনের জন্য চলাচলের সময় সর্বদা লাইনে বিদ্যুৎ থাকা আবশ্যক। অন্যথায় তা আটকে থেকে যাত্রীদের বিড়ম্বনার কারণ হবে। এ সমস্যায় অতীতে বিদ্যুৎচালিত ট্রেন চালুর উদ্যোগ এগোয়নি। কিন্তু এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে এবং লোডশেডিং সমস্যাও সীমিত হয়ে এসেছে। আরও বেশ কিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র চালু হচ্ছে। ফলে ট্রেন চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা এখন অসম্ভব নয়। আর এ কারণেই বিদ্যুৎচালিত ট্রেন চালুর উদ্যোগে জোর দেওয়া প্রয়োজন।
ভারতের উদাহরণ
বৈদ্যুতিক ট্রেন ব্যবহার করে ভারত ইতোমধ্যেই বিপুল পরিমাণ অর্থ বাঁচাচ্ছে। এ কারণে অবশিষ্ট ডিজেল ইঞ্জিনগুলোকেও অবসরে পাঠিয়ে সম্পূর্ণ রেলবহর বৈদ্যুতিক করার পরিকল্পনা করেছে ভারত। ভারতের সরকারি হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে জ্বালানী খাতে ভারতীয় রেলের খরচ হয় প্রায় ২৭ হাজার কোটি রুপি৷ যার মধ্যে শুধু ডিজেল কিনতে খরচ পরে ১৮ হাজার কোটি রুপি ও বিদ্যুৎ বাবদ খরচ পরে ৯ হাজার কোটি রুপি৷ ভারতীয় রেলওয়ে হিসাব কষে দেখেছে সমস্ত ইঞ্জিন বৈদ্যুতিকরণ করলে মোট খরচ পড়তে পারে ১৬ হাজার কোটি রুপি৷ এক্ষেত্রে ভারতীয় রেলের লাভ হবে ১১ হাজার কোটি রুপি৷
বাঁচবে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা
ডিজেল বাংলাদেশকে মুল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে আমদানি করতে হয়। অন্যদিকে অধিকাংশ বিদ্যুৎই দেশে উৎপাদিত হয়। আর এ কারণে ডিজেলের চেয়ে বৈদ্যুতিক রেল ইঞ্জিন দেশের অর্থনীতির জন্য সুবিধাজনক। এতে বিদেশ থেকে যে ডিজেল আমদানি করতে হয় কমবে সেই পরিমাণ৷ যার সরাসরি সুফল পড়বে দেশের অর্থনীতির ওপরে৷ এছাড়া ব্যয় সাশ্রয় হওয়ায় রেলওয়েও পরিচালনা ক্ষতি কমিয়ে লাভের মুখ দেখতে পারবে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্ট মহল।
বাড়বে গতি, কমবে চুরি ও অপচয়
রেলের ডিজেল ইঞ্জিনের চেয়ে বৈদ্যুতিক ইঞ্জিন শক্তিশালী হওয়ায় এর গতি বেশি থাকে। এছাড়া বৈদ্যুতিক ইঞ্জিনের রক্ষণাবেক্ষণ ডিজেল ইঞ্জিনের তুলনায় সহজ। রেলের তেল চুরির অভিযোগ পাওয়া যায় প্রায়ই। কিন্তু বৈদ্যুতিক ইঞ্জিনে রেল চালানো হলে তেল চুরির প্রশ্ন থাকবে না। ডিজেল ইঞ্জিনের রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় ছাড়াও এর বিভিন্ন খুচরা যন্ত্রাংশ কিনতে যে ব্যয় হয় তা বৈদ্যুতিক ইঞ্জিনে কম হবে। ফলে বৈদ্যুতিক ইঞ্জিনে অপচয়ও কম হবে।
সুত্র:দেশিখবর .কম