সুজিত সাহা :
বাংলাদেশ রেলওয়েতে বর্তমানে জনবল আছে ২৭ হাজার ৫৩৫ জন। নতুন করে আরো দুটি নতুন অঞ্চল স্থাপনের জন্য নতুন ২৮ হাজার ৮৪৭ জনবল নিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছিল রেলওয়ে। এ প্রস্তাব সংশোধন করে জনবল ৫০ হাজারে সীমাবদ্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এ হিসাবে রেলওয়েতে জনবল বাড়ানোর সুযোগ থাকছে সাড়ে ২২ হাজারের মতো।
জনবলসহ নতুন দুটি অঞ্চল স্থাপনে মোট ২ হাজার ২৮৫ কোটি ৬২ লাখ টাকার ব্যয় প্রস্তাব তৈরি করে রেলওয়ের এ-সংক্রান্ত কমিটি। প্রস্তাবটি রেলপথ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জনপ্রশাসনে পাঠানো হলে জনবলের পাশাপাশি ব্যয়ও ২ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনতে বলা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৫০ হাজার ২৭৫ জনের সংশোধিত জনবল কাঠামো তৈরির প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছে রেলওয়ে। রেলের প্রাথমিক প্রস্তাব অনুযায়ী নতুন দুটি অঞ্চল স্থাপন করা হলে রেলের জনবল কাঠামো ৫৬ হাজার ৩৮২ জনে উন্নীত হওয়ার কথা ছিল।
জানতে চাইলে এ-সংক্রান্ত কমিটির আহ্বায়ক ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কমল কৃষ্ণ বণিক বার্তাকে বলেন, নতুন দুটি বিভাগ হচ্ছে। ফলে রেলের লোকবল কাঠামো সংশোধন হবে এটাই স্বাভাবিক। আমরা যে প্রস্তাব দিয়েছিলাম, তা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ অনুযায়ী সংশোধন করে চূড়ান্ত প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে। প্রস্তাবটি আবারো জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সেখান থেকে অর্থ মন্ত্রণালয় ঘুরে এটি পাস হবে।
রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৮৩-৮৫ সালে এনাম কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী রেলের পূর্ণাঙ্গ জনবল কাঠামো তৈরি করা হয়। ওই প্রতিবেদনের আলোকে বর্তমানে রেলের সব দপ্তরে লোকবল নিয়োগ হয়ে থাকে। রেলওয়েকে চারটি অঞ্চলে বিভাজনের জন্য সাবেক রেল কর্মকর্তা মো. ফিরোজ মিয়াকে পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হয়।
রেলের নতুন অঞ্চল বিভাজন ও লোকবল কাঠামো সংশোধনে গঠিত কমিটির তথ্যমতে, নতুন দুটি অঞ্চলের মধ্যে উত্তরাঞ্চলের জন্য জনবলের প্রস্তাব করা হয়েছে মোট ১৩ হাজার ৪৮৭ জন। এসব লোকবলের জন্য বার্ষিক (ইনক্রিমেন্ট ব্যতীত) ৩৪০ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয় হবে রেলের। এছাড়া অফিস অ্যাকসেসরিজ, যানবাহন ও আনুষঙ্গিক স্থায়ী ব্যয় হবে ১৪৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। এর বাইরে ভূমি অধিগ্রহণে ১০০ কোটি, অফিস, বাসা-বাড়ি ছাড়াও স্কুল-কলেজ-হাসপাতাল নির্মাণে ১৫৮ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ব্যয় হবে। নতুন এ অঞ্চল বাস্তবায়নে বিভিন্ন প্রকল্পের অধীনে নিয়োগকৃত জনবলের বার্ষিক বেতন-ভাতা বাবদ ৬১ কোটি ৯৯ লাখসহ মোট ৮০৪ কোটি ২১ লাখ টাকা ব্যয় করতে হবে।
উত্তরাঞ্চলের তুলনায় দক্ষিণাঞ্চলের নতুন রেল অঞ্চল স্থাপনে ব্যয় দেখানো হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। দক্ষিণাঞ্চলের প্রস্তাবিত ১৫ হাজার ৩৬০ জনবলের জন্য বার্ষিক বেতন-ভাতা (ইনক্রিমেন্ট ব্যতীত) ধরা হয়েছে ২৩৮ কোটি ৩ লাখ, অফিস অ্যাকসেসরিজ, যানবাহন ও আনুষঙ্গিক স্থায়ী ব্যয় ৩৩২ কোটি ৫৪ লাখ, ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ ২৭২ কোটি, অফিস ও আনুষঙ্গিকে (স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, মসজিদ) ৪৭৭ কোটি ৫০ লাখ, প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রয়োজনে নিয়োজিত লোকবলের বার্ষিক বেতন-ভাতা ও প্রয়োজনীয় স্থাপনা নির্মাণে ৩৯৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে রেলের এ অঞ্চলের জন্য ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ১ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে বলেন, রেলওয়ে বর্তমানে মামলাসহ একাধিক কারণে শূন্য পদগুলোয় পদায়ন করতে পারছে না। রেলওয়ের বর্তমান কার্যপরিধি যেভাবে চলছে, তাতে দুটি নতুন অঞ্চল সৃষ্টি করলে জটিলতাই বাড়বে কেবল। এর চেয়ে বিদ্যমান কাঠামোর মধ্যেই ধীরে ধীরে রেলের পরিধি বাড়ানো সম্ভব। শুরুতে দুটি অঞ্চলকে চারটিতে ভাগ না করে বিভাগ বৃদ্ধির মাধ্যমে রেলের কার্যপরিধি বাড়ানো সম্ভব। নতুন কাঠামোর মাধ্যমে হঠাৎ করেই জনবল কাঠামো দ্বিগুণ করা হলে রেলের ব্যয়ও দ্বিগুণ বাড়বে।
২০১৪ সালে রেলওয়েকে চারটি অঞ্চলে ভাগ করার বিষয়টি আলোচনায় আসে। তবে দুটি অঞ্চল চালু করা হলে রেলের আয়ের চেয়ে ব্যয় বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে রেল কর্তৃপক্ষ। দেশের দক্ষিণাঞ্চলকে রেলের আওতায় আনার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আবারো নতুন দুটি অঞ্চল স্থাপনের পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়। বর্তমান রেলের পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চল কর্তৃপক্ষকে নতুন দুটি অঞ্চলের জন্য প্রয়োজনীয় লোকবল ও বার্ষিক ব্যয়ের হিসাব দিতে বলা হয়। রেলওয়ে প্রতি বছর প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার লোকসানে থাকায় বাড়তি দুই অঞ্চলের কারণে বড় ধরনের লোকসানের মুখোমুখি হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেন খোদ রেলসংশ্লিষ্টরাই।
রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, প্রতি বছর রেলের লোকসান হয় ৯৫০ থেকে ১ হাজার কোটি টাকা। নতুন লোকবল নিয়োগ ও অবকাঠামো স্থাপন হলে রেলের প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয় বাড়বে। তবে শুরুতে নতুন দুটি
অঞ্চল থেকে সে অনুপাতে আয় আসবে না। ফলে রেলের লোকসান আগামী বছর প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে রেলের ২০ বছর মেয়াদি মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী বিভিন্ন সম্প্রসারণ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে নতুন দুই অঞ্চলে রেল যোগাযোগও বাড়বে।
রেলের বর্তমান দুটি অঞ্চলে মোট রেলপথের দৈর্ঘ্য ২ হাজার ৮৭৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে মিটার গেজ (অধিকাংশই পূর্বাঞ্চলে) ১ হাজার ৬৪৮ কিলোমিটার, ব্রড গেজ ৬৫৯ কিলোমিটার ও ডুয়াল গেজ রেলপথ রয়েছে ৫৬৯ কিলোমিটার। পূর্বাঞ্চলে মোট রেলপথের দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৩০৮ ও পশ্চিমাঞ্চলে ১ হাজার ৫৬৮ কিলোমিটার।
সুত্র:বণিক বার্তা, আগস্ট ০৩, ২০১৮