শিরোনাম

কোটা আন্দোলনে রেলে ক্ষতি ২৩ কোটিরও বেশি


।। নিউজ ডেস্ক ।।
চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন কেন্দ্র করে সৃষ্ট সহিংসতা থেকে বাদ যায়নি রেলওয়ে। ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে ক্ষতি হয়েছে ট্রেনের ৪০টি কোচের। তিনটি ট্রেনের ইঞ্জিন ভাঙচুর করা হয়েছে। রেললাইন, রেলস্টেশন এবং বেশি ক্ষতি হয়েছে বাণিজ্যিক ও যান্ত্রিক বিভাগের। সব মিলিয়ে দেশে রেলের আর্থিক ক্ষতি ২৩ কোটি টাকার বেশি।

রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অগ্রিম টিকিটের অর্থ ১৬ কোটি ২৯ লাখ টাকা ফেরত দিতে হয়েছে। পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চল মিলিয়ে ছয় কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে ট্রেন ও রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায়। গতকাল শুক্রবার রাত পর্যন্ত ট্রেন পরিচালনার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরাপত্তায় স্বল্প দূরত্বে সীমিত পরিসরে ট্রেন পরিচালনার কথা ভাবা হচ্ছে। ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রথমে কমিউটার ট্রেন চালানো হতে পারে।

ছাত্র আন্দোলন ঘিরে সহিংসতা শুরুর ১৮ জুলাই দুপুরের পর থেকে সারা দেশে ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ১৯-২৪ জুলাই পর্যন্ত কাউন্টার ও অনলাইনে অগ্রিম টিকিটের অর্থ ফেরত দেওয়া হচ্ছে। রেলওয়ের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে প্রতিদিন ১০৬টি আন্তঃনগরসহ ৪০০ যাত্রী ও মালবাহী ট্রেন এবং দুই জোড়া আন্তঃদেশীয় ট্রেন চলাচল করে। মৈত্রী, বন্ধন এক্সপ্রেসসহ আন্তঃনগর ট্রেনের অগ্রিম টিকিটের যাত্রীদের টিকিটের সমপরিমাণ মূল্য ফেরত দিতে হচ্ছে। রাজধানী ঢাকা থেকে প্রতিদিন ৬৪ জোড়া ট্রেন যাতায়াত করে।

রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, সহিংসতায় সব মিলিয়ে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের ক্ষতি ২১ কোটি ৭০ লাখ টাকা। বাকি ক্ষতি হয়েছে রেলের পশ্চিমাঞ্চলে। রেলওয়ের উচ্চপর্যায়ের এক তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

রেল মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সহিংসতায় চার ট্রেনের ৪০টি কোচ ভাঙচুর ও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে চট্টলা এক্সপ্রেসের ১৩টি, সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনের ৭টি, জামালপুর এক্সপ্রেসের ৬টি, পারাবত এক্সপ্রেসের ৮টি ও কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেসের ২টি বগি ভাঙচুর করা হয়। কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেসের চারটি বগি পুরোপুরি পুড়ে গেছে। এ ছাড়া চট্টলা এক্সপ্রেস, কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস ও কর্ণফুলী কমিউটারের ইঞ্জিন ভাঙচুর করা হয়।

রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের দপ্তরপ্রধানদের নিয়ে গঠিত কমিটি প্রতিবেদনে বলেছে, দুষ্কৃতকারীরা রেলের এই ক্ষতি করেছে। প্রধান সংকেত ও টেলিযোগাযোগ প্রকৌশলী সুশীল কুমার হালদার কমিটির প্রধান। তিনি বলেন, সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে বাণিজ্যিক বিভাগের, এরপর যান্ত্রিক বিভাগের।

রেলওয়ের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায়। ১৯ থেকে ২৪ জুলাই বিভিন্ন গন্তব্যে ট্রেন চলাচল না করায় যাত্রীদের টিকিটের টাকা ফেরত দিতে হচ্ছে। তদন্ত প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, পূর্বাঞ্চলের আওতায় ঢাকা বিভাগের যাত্রীদের ফেরত দিতে হবে ১১ কোটি ৭০ লাখ টাকা এবং চট্টগ্রাম বিভাগের যাত্রীদের ফেরত দিতে হবে ৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকা।

রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক (চট্টগ্রাম) সাইফুল ইসলাম বলেন, ক্ষতির তদন্ত প্রতিবেদন রেল ভবনে পাঠানো হয়েছে। রেলের পশ্চিমাঞ্চলের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (রাজশাহী) আহম্মদ হোসেন মাসুম বলেন, পূর্বাঞ্চলের তুলনায় পশ্চিমে রেল ঘিরে নাশকতা কম হয়েছে। তবে আর্থিক ক্ষতির হিসাব রেলওয়ে সদর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর রেল ভবনে রেলপথমন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, সারা দেশে কয়েকটি জায়গায় ট্রেনে ও স্টেশনে রাখা বিভিন্ন যন্ত্রাংশে হামলা করা হয়েছে। এই কারণে এখনো ট্রেন চালানোর মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি।

তিনি বলেন, ট্রেন না চলার কারণে টিকিট রিফান্ড করতে হচ্ছে। এটা সবচেয়ে বড় ক্ষতি। এখন পর্যন্ত ১৬ কোটি ২৯ লাখ টাকার বেশি টিকিট রিফান্ড করা হয়েছে যাত্রীদের। এ ছাড়া পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চল মিলিয়ে রেলের মোট ক্ষতি হয়েছে ২২ কোটি ৩ লাখ ৮ হাজার টাকা। এদিকে গতকাল ও পরশু মিলিয়ে রেলের আর্থিক ক্ষতি ২৩ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।

রেলমন্ত্রী বলেন, রেলের ইঞ্জিন ও কোচের সংখ্যা কম। এর পরও রেল সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছে। এখন এই মুহূর্তে ট্রেন পরবর্তী পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করেই চলাচল করবে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও এই বিষয়ে কথা হয়েছে।

অন্যদিকে ১৯ জুলাই গাইবান্ধায় কোটা আন্দোলনের সমর্থনে বিএনপির নেতাকর্মীরা মিছিল বের করলে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। সেই সময় পুলিশ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা গাইবান্ধা রেলওয়ে স্টেশনে ভাঙচুর চালায়। এ ঘটনায় গাইবান্ধা রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির এসআই আব্দুর সবুর মিয়া বোনারপাড়া রেলওয়ে থানায় মামলা করেন। এ মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় ১৫০ থেকে ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রাজশাহী, জামালপুরসহ বেশ কয়েকটি জেলায় রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ঢাকা রেলওয়ে বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা শাহ আলম কিরণ শিশির বলেন, মৈত্রী, বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট ১ মাস আগ থেকেই কাটা হয়। আন্তঃনগর ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি হয় ১০ দিন আগ থেকে। অগ্রিম টিকিট কাটা যাত্রীদের টিকিটমূল্য ফেরত দেওয়া হচ্ছে।

ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনমাস্টার আনোয়ার হোসেন বলেন, বিভিন্ন জেলা প্রশাসকের অনুমতি না পাওয়ায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরও বৃহস্পতিবার কমিউটার ট্রেন বন্ধ রাখা হয়েছে। শুক্রবার রাত পর্যন্ত ট্রেন পরিচালনার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত পাইনি। সবাই জানতে চাচ্ছেন কবে থেকে ট্রেন চলাচল শুরু হবে।

সূত্রঃ কালবেলা


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।